চাকরির প্রলোভনে রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুরমুশী গ্রামের যুবক নাজির উদ্দিন। প্যাকেজিং কোম্পানিতে কাজের আশায় দেশ ছাড়লেও, তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে। সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পর থেকে তিনি নিখোঁজ। এতে উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার।
নাজির উদ্দিন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের একমাত্র ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুরের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দুবাই হয়ে রাশিয়ায় পৌঁছে তাকে প্রথমে একটি ক্যাম্পে রাখা হয়। পরে আরও বাংলাদেশিদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় এক স্থানে, যেখানে ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণের পর ইউক্রেন সীমান্তে পাঠানো হয়।
১৬ এপ্রিল ফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে পরিবারের সঙ্গে শেষবার কথা বলেন নাজির। তিনি জানান, তাকে সম্মুখ যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।
তার স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, “আমার স্বামীই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আমার সাড়ে তিন বছরের মেয়েটি প্রতিদিন বাবার ফোনের অপেক্ষায় থাকে।” নাজিরের বাবা বলেন, “ছেলে তো চাকরির আশায় গিয়েছিল, যুদ্ধ করতে নয়। যারা মিথ্যা বলে ওকে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার চাই। সরকার ও রাশিয়ার দূতাবাসের কাছে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করছি।”
রাশিয়া যাওয়ার জন্য পরিবারটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করে, যার চূড়ান্ত ব্যবস্থা করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি মামুন। এই ঘটনায় ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাইদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে এপ্রিলের মাঝামাঝি ইউক্রেন যুদ্ধে প্রাণ হারান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক আকরাম হোসেন। তিনি আট মাস আগে রাশিয়া গিয়েছিলেন চাকরির আশায়। ১৩ এপ্রিল তার সঙ্গে পরিবারের শেষ কথা হয়, ১৯ এপ্রিল আসে মৃত্যুর খবর।
সিআইডির মানবপাচার সেলের তথ্যমতে, ঢাকাভিত্তিক ‘ড্রিম হোম ট্রাভেল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত দুই বছরে অন্তত ২০ জন বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।