২০২৪ সালের এই দিনে, ২০ জুলাই, সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। রাজধানীজুড়ে সেনা মোতায়েন এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেও থামানো যায়নি বিক্ষোভ। ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর একাধিক এলাকায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলি ও ব্যাপক ভাঙচুর ঘটে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, সেদিন অন্তত ২৬ জন নিহত হন এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছাত্র।
সকালেই তৎকালীন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেন যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে কারফিউ বলবৎ থাকবে। সেনাবাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টহল শুরু করে এবং মোড়ে মোড়ে বসানো হয় তল্লাশিচৌকি। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় গণগ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে।
সেদিন আন্দোলনকারী সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর শীর্ষ নেতা ও সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেলা ১১টার দিকে বেইলি রোড থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তার অবস্থান সম্পর্কে রাত পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন মন্ত্রী—আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী—আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠকে বসেন। আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক ওই বৈঠকে অংশ নেন এবং কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূরীকরণ, আটককৃতদের মুক্তি ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ আট দফা দাবি লিখিত আকারে পেশ করেন। তবে বৈঠককে ঘিরে আন্দোলনকারীদের মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দেয়। কেউ কেউ একে ‘অগ্রগতি’ বলে উল্লেখ করলেও, অন্যরা সরকারের অবস্থানকে ‘অস্পষ্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এদিন ঢাবি এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। বিকেল ২টার দিকে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন।
দিনশেষে রাজধানীর রাস্তাগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের নজরদারির মধ্যে একটি থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।