চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি–জুন) দেশে খুনের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েছে। জানুয়ারিতে যেখানে খুনের মামলা ছিল ২৯৪টি, জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪টিতে। পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে খুনের মোট মামলা হয়েছে ১,৯৩৩টি। যেখানে গত চার বছরে (২০২০–২০২৩) মাসপ্রতি খুনের মামলার গড় ছিল ২৬৯টি, সেখানে ২০২৫ সালে গড় বেড়ে হয়েছে ৩২২টি। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে খুনের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ—মোট ৪,১১৪টি মামলা।
সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ড জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। চাঁদাবাজি ও দলীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ডাকাতির মামলা হয়েছে ৩৬৭টি। জানুয়ারিতে মামলা ছিল ৭১টি, যা জুনে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯টিতে। যদিও মাসভিত্তিক হ্রাস দেখা যাচ্ছে, বার্ষিক প্রবণতায় সংখ্যাটি বাড়তির দিকেই। ২০২৩ সালে সারা বছরে ডাকাতির মামলা ছিল ৩১৯টি, ২০২৪ সালে বেড়ে হয় ৪৯০টি।
দস্যুতার ঘটনা তুলনামূলক কমলেও এখনও উদ্বেগজনক। ছয় মাসে মামলা হয়েছে ৯৭২টি—যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বার্ষিক গড়ের সমান।
ধর্ষণের মামলাও ঊর্ধ্বমুখী। জানুয়ারিতে মামলা ছিল ৩৯২টি, জুনে তা বেড়ে হয়েছে ৪৯২টি; মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৭৭৫। নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যা ছয় মাসে হয়েছে ৬,১৪৪টি—যেখানে ২০২৪ সালে পুরো বছর ছিল ১০,১৯৮টি।
অপহরণের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি–জুন সময়ে অপহরণের মামলা হয়েছে ৫১৭টি, যা আগের কয়েক বছরের বার্ষিক গড়ের সমান। একই সময়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হয়েছে ৩২৯টি মামলা।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং মানুষের নিরাপত্তাবোধ, বিচারপ্রক্রিয়ায় আস্থা এবং মামলার জট নিরসনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. তৌহিদুল হক বলেন, “সংখ্যা দিয়ে পরিস্থিতিকে আড়াল করা যায় না। খুন, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সরকারের উচিত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”