সিরিয়ার ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের অনুরোধে তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছেন বলে জানান। তবে গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে কোনো শান্তিপূর্ণ অগ্রগতির ঘোষণা আসেনি। এই সংকটে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কাতারের রাজধানী দোহায় একটি ব্যবসায়িক গোলটেবিল বৈঠকে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র গাজাকে একটি ‘ফ্রিডম জোন’ বানাবে। সেখানে আর কিছু রক্ষার নেই।” তিনি জানান, গাজা দখল করে সেখানে নতুনভাবে কিছু শুরু করার পরিকল্পনা তার রয়েছে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতেও তিনি গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পাঠানোর কথা বলেন।
এই মন্তব্য বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। জাতিসংঘ, আরব দেশসমূহ এবং ফিলিস্তিনি নেতারা একে ‘জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
বর্তমানে গাজার ২৩ লাখ মানুষের বেশিরভাগই গৃহহীন। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে।
ট্রাম্প আরও বলেন, “আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখেছি, সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে বসবাস করছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি গর্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে গাজা দখলের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমি চাই ওটা হোক ফ্রিডম জোন।”
তবে ফিলিস্তিনিরা গাজা ত্যাগের প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম বলেন, “গাজা ফিলিস্তিনি ভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ—এটা বিক্রির জন্য উন্মুক্ত বাজারের সম্পত্তি নয়।” তবে তিনি স্বীকার করেন, ট্রাম্প চাইলে গাজা যুদ্ধ থামানো এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারেন।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে, যা ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য হস্তক্ষেপ হতে পারে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে প্রশংসা করেছেন। তিনি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে গাজা ত্যাগ করলে কোন দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এদিকে, গাজায় বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই দক্ষিণ গাজার শহর খান ইউনিসের। হামাস-পরিচালিত সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে খান ইউনিস থেকে ৫৬ জন, বেইত লাহিয়া থেকে চারজন এবং দেইর আল-বালাহ থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু ছিল। খান ইউনিসের সামুর পরিবারের ১৩ সদস্যের নাম নাগরিক নিবন্ধন থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।