Ridge Bangla

কীভাবে নির্বাচিত হবেন পরবর্তী পোপ?

মারা গেলেন পোপ ফ্রান্সিস; রেখে গেলেন আদর্শ আর ৮৮ বছরের বর্ণিল জীবন। পোপের মৃত্যুতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা৷ প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না। করেন না ভ্যাটিকানের কার্ডিনালরাও। একদিকে তাই পোপ ফ্রান্সিসের দেহান্তের শোক, অন্যদিকে নতুন পোপ নির্বাচনের প্রস্ততি শুরু।

Image: Vincenzo Pinto/AFP/Getty Images

ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন পোপ। বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু হিসেবে ক্ষমতায় বসেন পোপেরা। ‘পোপ’ শব্দের অর্থ ফাদার বা পিতা। ধর্মীয় ও বৈশ্বিক দৃষ্টিতে যার গুরুত্ব অনেক, কীভাবে নির্বাচন করা হয় এমন একজন নেতাকে? বর্তমান পোপের মৃত্যুর কতদিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয় নতুন পোপ? চলুন তবে জেনে আসা যাক পুরো প্রক্রিয়াটা।

পোপের মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় মানসিক প্রস্তুতি। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ভোটাভুটির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয় নির্বাচন। সারাবিশ্বের সব ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগুরুকে বেছে নেওয়ার গুরুদায়িত্ব থাকে ১২০ জন কার্ডিনালের ওপর। এই কার্ডিনালদের ভোটের আগে রাখা হয় সিস্টেইন চ্যাপেলের গোপন ও নির্জন পরিবেশে, যাতে বাইরের কোনো বলয় তাদের প্রভাবিত করতে না পারে।

Image: AP/Riccardo De Luca

আচ্ছা, এই কার্ডিনাল কারা?

বিশ্বের বিভিন্ন ক্যাথলিক চার্চের বয়োজ্যেষ্ঠ বিশপদের বলা হয় কার্ডিনাল। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২৪০ জনের মতো কার্ডিনাল থাকলেও ভোট দেওয়ার অধিকার আছে ১৩৮ জনের। নিয়মানুযায়ী, ৮০ বছরের বেশি বয়সী কোনো কার্ডিনাল ভোট দিতে পারবেন না। বর্তমান পরিষদে মোট ১১০ জন কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের নিয়োগ করা।

এই কার্ডিনালরা মিলে ভোটের আগ পর্যন্ত সিস্টেইন চ্যাপেলে বসে আলোচনা করবেন আগামীর নেতা কে হবে, তা নিয়ে। পোপের মৃত্যুর পর থেকে পরের পোপ নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সময়কে বলা হয় সেদে ভাকান্তে বা শূন্য আসন। শুরু থেকে ভোট দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় পেপাল কনক্লেভ। মোটামুটি কয়েকটি ধাপে শুরু হয় নির্বাচনের কাজ। নির্বাচিত ৯ জন কার্ডিনাল কাজের তদারকি করেন, যে কাজ অনেকটা নির্বাচন কমিশনারের মতোই।

Raphael's tapestries in the Sistine Chapel | Apollo Magazine
Image © Governatorato SCV – Direzione dei Musei

এবার আসা যাক ভোটের দিনে। একটি কাগজে ল্যাটিন ভাষায় লেখা থাকে, ‘সর্বোচ্চ পোপ হিসেবে আমি নির্বাচিত।’ এরপর কাগজের নিচে ভোট দেন কার্ডিনালরা। প্রত্যেক কার্ডিনালের ভোট শেষে একটি পাত্রে রাখা হয় ব্যালট পেপার। নিজের নাম ছাড়া যেকোনো কার্ডিনালের নামই লিখতে পারেন ভোটাররা। এরপর শুরু হয় গণনার পালা।

গণনা শেষে ফল ঘোষণার সময়। কে কত ভোট পেলেন, তা শোনানো হয়। কোনো কার্ডিনালের ভাগ্যে যদি দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পড়ে, তাহলে পরবর্তী পোপ হিসেবে তিনিই নির্বাচিত হবেন। পরবর্তী ধাপে পুড়িয়ে ফেলা হয় ব্যালট পেপার। একধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে একটি চুল্লিতে দেওয়া হয় কাগজগুলো।

ভ্যাটিকানের ছাদ থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে, যার অপেক্ষায় থাকে সবাই। ধোঁয়ার রঙের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ। যদি রং কালো হয়, তাহলে কেউই নির্বাচিত হয়নি। আর সাদা রঙের ধোঁয়া বের হলে বুঝে নিতে হবে রোমের ক্যাথলিক চার্চ পেয়ে গেছে নতুন ধর্মগুরুকে।

Image: Times of India

সাদা ধোঁয়া ওড়ার পরবর্তী এক ঘণ্টার মধ্যে জনসমক্ষে আসেন নতুন পোপ। একজন কার্ডিনাল তাকে পরিচয় করিয়ে দেন সবার সঙ্গে। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জানান, তারা একজন পোপ পেয়েছেন। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের সামনের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নতুন পোপ জনতার উদ্দেশে প্রথমবার কথা বলেন এবং প্রার্থনা করেন।

এ তো গেল নির্বাচিত হওয়ার পরের ব্যাপার। যদি ভ্যাটিকানের ছাদ থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়? তাহলে পরদিন আবার ভোটাভুটি হয়। সেই ভোট চলতে পারে কয়েক দিন, সপ্তাহ, এমনকি আরও বেশি সময় ধরে। এটি নির্ভর করে কার্ডিনালদের ওপর।

প্রথমবার না হলে পরবর্তীতে প্রতিদিন কনক্লেভে চার দফা পর্যন্ত ভোট করাতে পারেন দায়িত্বরতরা। এভাবে ৩৩ দফা ভোটের পরও যদি কোনো সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে তখন রান-অব ভোট হয়। এর আগেই অবশ্য রোমান ক্যাথলিকরা তাদের নতুন ধর্মগুরুকে পেয়ে যান। শুরু হয় নবযাত্রা।

Pope Francis waves the crowd from the central balcony of St. Peter's Basilica at the Vatican on Wednesday.
Image: L’Osservatore Romano via AP

পোপ নির্বাচনের নিয়মগুলো এখন তুলনামূলক সহজ হলেও আগে এমন ছিল না। সর্বশেষ তিন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয় নিয়মে। ফলে সময় লাগে না বেশি। কয়েকদিনেই ভ্যাটিকান পেয়ে যায় সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসুরী। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১২৭১ সালে পোপ দশম গ্রেগরির নির্বাচনে সময় লেগেছিল প্রায় তিন বছর।

আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। ইতালির রোম শহরের বুকে গড়ে ওঠা আস্ত এক দেশেই বাস খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মগুরুর। রোমান ক্যাথলিক গির্জার সর্বাধিনায়কের নির্বাচন প্রক্রিয়াও তাই ভীষণ সতর্ক ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন