Ridge Bangla

ভাইরাসে বাগেরহাটে চিংড়ি উৎপাদনে ধস, দিশেহারা চাষিরা

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন নেমে এসেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ির ঘেরগুলো সাদা স্পট ও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দফায় দফায় চিংড়ি মারা যাচ্ছে। দেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য এই পণ্যের ক্ষতি চাষিদের মাথায় হাত তুলেছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া গ্রামের চাষি ভোলা নাথ বিশ্বাস বলেন, “গত দুই দশক ধরে ৩ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করছি। আগে লাভ ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোগবালাইয়ের কারণে টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এ মৌসুমের শুরুতে ভালো উৎপাদন হলেও মাছ ধরার আগেই তিন দফায় চিংড়ি মারা গেছে। অনেকের গায়ে সাদা স্পট দেখা দেয়, আবার অনেক মাছ পানিতে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।”

শরণখোলা উপজেলার চাষি হানিফ শেখ জানান, ঋণ নিয়ে ঘের তৈরি করেছেন, কিন্তু এখন ঘের খালি হয়ে যাচ্ছে। দালালদের কাছে ঋণ শোধ করতে না পারলে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। মোড়েলগঞ্জের চাষি মেহেদী হাসান বলেন, উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারের দামও অস্থির, আগে লাখ টাকার মতো আয় হতো, এখন খরচও উঠছে না।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির বলেন, “প্রতিবছর কিছু চিংড়ি মারা যায়, তবে এবার মৃত্যু বেশি এবং পচে যাচ্ছে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি থমকে গেছে। মৎস্য বিভাগ ও চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে রোগবালাই বাড়ছে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তিনি চাষিদের পরিকল্পিত পোনা নির্বাচন, ঘের প্রস্তুতি ও পানি ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়েছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় ৫১,১৫৯ হেক্টর জমিতে ৪৬,৩১৩টি বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। গত অর্থ বছরে উৎপাদন ছিল ২০,৯৪০ মেট্রিক টন, কিন্তু এবার তা কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আরো পড়ুন