তাইওয়ানের চারপাশে বড় পরিসরে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই মহড়ায় চীনের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও রকেট ফোর্স একত্রে অংশ নিয়েছে। বেইজিং এই মহড়াকে তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ‘কঠোর সতর্কবার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। একইসঙ্গে চীনা কর্তৃপক্ষ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে ‘পরজীবী’ আখ্যা দিয়েছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়ার অংশ হিসেবে চীনের একাধিক যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের ২৪ নটিক্যাল মাইলের (৪৪ কিলোমিটার) মধ্যে চলে আসে। তাইওয়ানও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তাদের নিজস্ব নৌবাহিনী মোতায়েন করে। তবে চীনা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও কোনো সরাসরি গোলাবর্ষণ করা হয়নি বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
চীনের সামরিক মহড়ার লক্ষ্য
চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য- সামরিক প্রস্তুতিমূলক টহল, আকাশ ও সমুদ্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, সমুদ্র ও স্থলভাগে হামলা পরিচালনা এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ও রুটের ওপর অবরোধ আরোপ।
এর আগে, গত মাসে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে চীনকে ‘বিদেশি শত্রু শক্তি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং লাইকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে লাইকে কার্টুনের মাধ্যমে একটি পোকার মতো দেখানো হয়েছে, যাকে চপস্টিক দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে এবং তার নিচে জ্বলন্ত তাইওয়ান দেখানো হয়েছে।
তাইওয়ানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
চীনের এই মহড়ার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ান। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “চীনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যেই সমস্যাসৃষ্টিকারী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।” তারা আরও জানিয়েছে, তাইওয়ানের সরকার আত্মরক্ষার জন্য যথেষ্ট সক্ষম এবং আত্মবিশ্বাসী।
তাইওয়ান দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে এবং বলছে, শুধুমাত্র তাইওয়ানের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারবে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের সফরের পরই মহড়া
তাইওয়ান সরকারের সূত্রে জানা গেছে, চীনের সামরিক মহড়ার আগের দিন শানডং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গ্রুপ তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রবেশ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ান তাদের যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে।
উল্লেখ্য, এই মহড়া এমন এক সময়ে শুরু হলো যখন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সম্প্রতি জাপান ও ফিলিপাইনে সফর শেষ করেছেন। সফরকালে তিনি চীনের সমালোচনা করে বলেন, “জাপান চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অপরিহার্য অংশীদার।“
চীনের এই মহড়া তাইওয়ানকে ঘিরে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।