জাপানের অর্থনীতি ভয়াবহ এক মেগা ভূমিকম্পের কবলে পড়লে প্রায় ১.৮১ ট্রিলিয়ন ডলার (২৭০.৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন) ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির সরকার। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্যাসিফিক উপকূলীয় অঞ্চলে বহুদিন ধরে আশঙ্কিত এক বিশাল ভূমিকম্প এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হতে পারে। এতে ভয়াবহ সুনামি সৃষ্টি হবে, শত শত ভবন ধসে পড়বে এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারাতে পারে।
অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির আশঙ্কা
জাপানের ক্যাবিনেট অফিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। ২০১৩ সালে পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে এ ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২১৪.২ ট্রিলিয়ন ইয়েন, তবে নতুন প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক মন্দা ও আপডেটেড ভূতাত্ত্বিক তথ্য বিবেচনায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
৮০% সম্ভাব্যতার ভূমিকম্প ও মৃত্যুর আশঙ্কা
জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নানকাই ট্রাফ (Nankai Trough) নামক ভূকম্পনপ্রবণ এলাকায় আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ৮০% সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে—
- প্রায় ১২.৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হতে পারে।
- শীতকালে রাতে ভূমিকম্প হলে ২.৯৮ লাখ মানুষ সুনামি ও ভবন ধসের কারণে প্রাণ হারাতে পারে।
নানকাই ট্রাফ ও ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি
নানকাই ট্রাফ জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের প্রায় ৯০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে ফিলিপাইন সি প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে চাপা পড়ছে। এই টেকটোনিক চাপ প্রায় প্রতি ১০০-১৫০ বছরে একবার বিশাল ভূমিকম্প সৃষ্টি করে।
২০১১ সালের স্মরণীয় বিপর্যয়
২০১১ সালে জাপানের উত্তরাঞ্চলে ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পের ফলে ভয়াবহ সুনামি হয়েছিল। এতে—
- ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়;
- ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রে তিনটি রিঅ্যাক্টর গলে যায়;
- পুরো দেশ এক চরম মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।
এরপর ২০২৩ সালে নানকাই ট্রাফের প্রান্তে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাপান প্রথমবারের মতো মেগা ভূমিকম্পের সতর্কতা জারি করে এবং জানায়, এই অঞ্চলে ৯ মাত্রার আরও বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানকে এখনই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। নাহলে সম্ভাব্য মেগা ভূমিকম্প ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।