Ridge Bangla

পোশাকশিল্পের বাজার ধরতে প্রয়োজন সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও সতর্কতা

পোশাকশিল্পের মূল ভিত্তি হলো কাপড়, আর কাপড় তৈরির প্রধান উপকরণ হলো সুতা। সাধারণত এই সুতা প্রাকৃতিক তুলা থেকে তৈরি হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তুলার উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং এর সহজলভ্যতাও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তুলার দামও বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী বিকল্প হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে কৃত্রিম সুতা, বিশেষ করে পলিয়েস্টার ফাইবার। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে সুতি কাপড়ের জায়গা দখল করে নিচ্ছে পলিয়েস্টার বা মিশ্র পলিয়েস্টার কাপড়। কিন্তু এই পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ।

তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য হলেও এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেক্সটাইল খাত কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নত হয়নি। এর অন্যতম কারণ স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল উৎপাদনে বৈষম্যমূলক শিল্পনীতি। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা প্রাইজ ওয়াটার হাউস কুপার্সের (PwC) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পোশাক রপ্তানির ৬২ শতাংশই ম্যান মেইড ফাইবার (এমএমএফ) ভিত্তিক। সেখানে কটনের অংশ মাত্র ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ঠিক উল্টো চিত্র—রপ্তানি হওয়া পোশাকের ৬৭ শতাংশই সুতি কাপড় আর মাত্র ২৮ শতাংশ এমএমএফ। অন্যদিকে ভিয়েতনামের ৬৬ শতাংশ এবং তুরস্কের ৪৯ শতাংশ পোশাকই কৃত্রিম সুতায় তৈরি।

গত দশকের তথ্য বলছে, বিশ্ববাজারে কটনের চাহিদা স্থির থাকলেও এমএমএফ-এর চাহিদা বছরে ৬ থেকে ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু এই সম্ভাবনাময় বাজার ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, এমএমএফ উৎপাদনের মূল কাঁচামাল পেট চিপস এতদিন ছিল আমদানিনির্ভর। যদিও সম্প্রতি চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোনে মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে, তবে সরকারি নীতি সহায়তার অভাবে এ খাত থেকে আশানুরূপ সাফল্য আসছে না।

বাংলাদেশে প্রচলিত টেক্সটাইল খাতে বছরে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টন এমএমএফ-এর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু একমাত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রি এর মধ্যে মাত্র ৮০ হাজার টন উৎপাদন করতে পারে, যা মোট চাহিদার প্রায় ৪৫ শতাংশ। এই ১ লাখ ৭০ হাজার টন পেট চিপসের বাজারমূল্য ১৭০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কয়েক বছর আগেও এর সবটাই আমদানি করা হতো, মূলত চীন থেকে। এখন দেশীয় উৎপাদনের ফলে প্রতিবছর প্রায় ৬৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, সম্ভাবনাময় এই খাতকে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন নীতি সহায়তা, টেকসই বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তা না হলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

আরো পড়ুন