Ridge Bangla

ভাই হত্যার বিচার চেয়ে নিজেই জুলাই হত্যা মামলার আসামি!

সাভারের দক্ষিণ রাজাশনের বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন গোলদার একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছিলেন ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতিও। তবে ২০১৩ সাল থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও মামলার ভয় থেকে রাজনীতি থেকে সরে আসেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরে গেলেও এড়াতে পারেননি বিপদ।

২০২৩ সালে ঘটে যায় চাঞ্চল্যকর ঘটনা—নৃশংসভাবে খুন হন ইমরানের বড় ভাই জামাল গোলদার। পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফোরকান হাকিম পূর্ব বিরোধের জেরে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে জামালকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে নিয়মিত আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন ইমরান, কিন্তু আজ পর্যন্ত বিচার পাননি তিনি। উল্টো একের পর এক মামলার জালে জড়িয়ে পড়েছেন নিজেই।

পুলিশ সূত্র জানায়, বর্তমানে ইমরানের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় পাঁচটি হত্যা ও হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। এসব মামলার একাধিকটি এমন সময় ও স্থানে ঘটেছে, যেখানে একই সময়ে একাধিক মামলায় ইমরানের উপস্থিতি প্রমাণ করাই কঠিন।

উদাহরণস্বরূপ, গত ৫ আগস্ট রাজধানীর শনির আখড়ায় একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার আট মাস পর, ২২ এপ্রিল কদমতলী থানায় পারভেজ হোসেন নামে একজন ব্যক্তি একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে ৪৮১ জনের নামের তালিকায় ইমরানকে রাখা হয় ১২৮ নম্বরে।

অবাক করার বিষয় হলো, একই দিনে দুপুর ২টায় আশুলিয়ায় আরেকটি গুলিবর্ষণের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলায় ৪৩০ নম্বরে ইমরানকে আসামি করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর দুই প্রান্তে দুটি হত্যাকাণ্ডে কীভাবে একই ব্যক্তি সম্পৃক্ত থাকতে পারেন?

এর পাশাপাশি, জুলাই মাসে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে সংঘটিত একটি হত্যা মামলাতেও এবং ১০ অক্টোবর দায়ের হওয়া আরেকটি হত্যা চেষ্টার মামলাতেও তার নাম যুক্ত করা হয়েছে।

ইমরানের স্ত্রী নাজমা আক্তার অভিযোগ করেন, জামাল গোলদার হত্যার মূল অভিযুক্ত ফোরকান হাকিম ও তার ভাই, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান হামিদ প্রতিহিংসামূলকভাবে এসব মামলার পেছনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তারা বলেন, মামলা তুলে নিতে তাদের পরিবারকে নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং ইমরানকে একাধিকবার শারীরিক নির্যাতনের মুখেও পড়তে হয়েছে।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয় ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর, যখন জামালের ছেলে রিয়াদুল ইসলাম ঢাকায় থেকে সাভারে ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ডে হামলার শিকার হন। অভিযুক্তদের মধ্যে রায়হান ও ফোরকান হাকিমের নাম উঠে আসে। এরপর রিয়াদুলের বিরুদ্ধে উল্টো ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনার চেষ্টা করা হয়, যদিও পুলিশ সেই মামলা নেয়নি। পরে রিয়াদুলের মা মশিউরা বেগম সাভার থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।

পরিবারটি বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আইনি হয়রানির মধ্যে দিন পার করছে। তারা সরকারের শীর্ষ মহলের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন