বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে সদস্য সংখ্যা কমানো এবং অন্তত ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে। এদের নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্যানেল গঠন করবে। প্যানেলের বাইরে থেকে কাউকে নিয়োগ দিতে হলে তাকে অত্যন্ত বিশিষ্ট ও যোগ্য ব্যক্তি হতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে”।
বর্তমান ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন পরিচালক থাকতে পারেন। নতুন সংশোধনীতে এই সংখ্যা আরও কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।
গভর্নর মনসুর আরও জানান, দুর্বল অবস্থায় থাকা পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। একইসঙ্গে কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকও এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হবে। কিছু ব্যাংক প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় রয়েছে, অন্যদিকে কিছু তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকা ব্যাংককে তাদের সঙ্গে একীভূত করা হবে।
তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়া চলমান এবং সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে।”
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) নিয়েও গভর্নর মনসুর বলেন, অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে, যাদের খেলাপি ঋণ ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থায় আছে। বাকি ২০টির বিরুদ্ধে লাইসেন্স স্থগিত না করার কারণ জানতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন বা একীভূতকরণের মাধ্যমে সমাধানের পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে।
খেলাপি ঋণ আদায় দ্রুততর করতে অর্থঋণ আদালত আইনে সংশোধন এবং বেঞ্চ সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। পাশাপাশি আর্থিক খাতের জন্য বিশেষায়িত ‘জুডিশিয়াল ক্যাডার’ গঠনের ওপরও জোর দেন, যাতে খেলাপিরা রিট আবেদন করে মামলা দীর্ঘায়িত করতে না পারে।