গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল থানাগুলো হবে জনবান্ধব সেবাকেন্দ্র। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সরেজমিনে তদন্তে দেখা গেছে, থানাগুলোর কার্যক্রমে এখনো সক্রিয় রয়েছে একটি অদৃশ্য শক্তি—‘দালাল চক্র’। আগে তারা খোলাখুলি কাজ করলেও এখন তারা অদৃশ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাজধানীর ৫০টি থানায় নতুন করে অন্তত ২১৩ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে। এরা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব ব্যবহার করে মামলা, জামিন, ছাড়পত্রসহ নানা কাজে তদবির চালিয়ে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
ডিএমপির ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশনের (আইএডি) তথ্য অনুযায়ী, তেজগাঁও বিভাগে ৪৫ জন, লালবাগে ৩৮ জন, মিরপুরে ৩২ জন, গুলশান ও ওয়ারীতে ২৬ জন, মতিঝিলে ১৬ জন এবং উত্তরায় ১০ জন দালাল নিয়মিত তৎপর। মোহাম্মদপুর থানায় সর্বাধিক ১৪ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে।
আগে এসব দালাল ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী পরিচয়ের। সরকার পরিবর্তনের পর পুরনোরা নিষ্ক্রিয় হলেও এখন নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে তারা থানার কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম দাবি করেছেন, ‘‘৫ আগস্টের পরে সব থানাই দালালমুক্ত হয়েছে।’’ তবে মাঠপর্যায়ের তথ্য ভিন্ন কথা বলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলিশের কিছু সদস্যের নমনীয়তা এবং ব্যক্তিগত লাভের সম্পর্ক এই দালাল চক্রের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখছে। সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, “দালাল নির্মূলে চাই কড়া তদারকি, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা ও প্রকাশ্য প্রতিরোধ।” তাঁর মতে, দালালদের ছবি ও নাম দিয়ে থানা চত্বরে পোস্টার দেওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “দালালদের মাধ্যমে সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে, এতে পুলিশ-জনতার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, দালাল চিহ্নিত করে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং থানাভিত্তিক সংস্কার ছাড়া এই চক্র নির্মূল করা সম্ভব নয়।
সরকার পরিবর্তন হলেও থানার দালাল সংস্কৃতি এখনো অব্যাহত। প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবতায় দালালদের দাপট এখনো থামেনি।