ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মুখ খুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামলার বিষয়ে তিনি আগেই জানতেন এবং ঘটনাটি ছিল তার কৌশলের অংশ।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা সব জানতাম। আমি চেয়েছিলাম ইরানকে অপমান ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। আমি খুব চেষ্টা করেছি, কারণ আমি চাইতাম একটা চুক্তি হোক।” তবে তিনি মনে করেন, এখনও কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ রয়েছে। “এখনো দেরি হয়নি,” বলেন ট্রাম্প।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হামলা পিছিয়ে দিতে বলেছিলেন তিনি, যাতে বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা যায়। আলোচনায় ব্যর্থ হলে ইরানকে হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে ট্রাম্প ‘চমৎকার’ ও ‘অত্যন্ত সফল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “এটা আমার কৌশলেরই অংশ—একদিকে সোজাসাপটা কথা বলা, অন্যদিকে দর-কষাকষি।”
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন করবে কি না—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইসরায়েলের খুব ঘনিষ্ঠ। আমরা তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র। দেখা যাক, কী হয়।” তবে হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ঠেকাতেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে। যতদিন হুমকি থাকবে, ততদিন অভিযান চলবে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হওয়া হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফিন দেফরিন জানান, অন্তত আট শহরে শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে তেহরান, নাতাঞ্জ ও তাবরিজ শহরের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলো।
ইরানের সংবাদমাধ্যম নুরনিউজ জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন পরমাণুবিজ্ঞানী। তেহরানের আবাসিক এলাকাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ইসরায়েলের দুটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে তারা। অন্যদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে তেল আবিবকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই ঘটনাপ্রবাহ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার আগুন ছড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।