চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একসময় জমজমাট ছিল জাহাজভাঙা শিল্প। কিন্তু বর্তমানে এ শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। উপজেলার ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা ১৮০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ২৪টি, বাকি ১৫৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
শিল্প ধ্বংসের ফলে সরকার প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, পাশাপাশি কাজ হারাচ্ছেন অন্তত দুই লাখ শ্রমিক ও কর্মচারী। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রি-সাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংকের বিধিনিষেধ, ডলার সংকট, স্ক্র্যাপ জাহাজের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি জটিলতা এবং বিদেশি আগ্রহের হ্রাস—সব মিলিয়ে এই শিল্প ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।
এর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, পরিবেশবান্ধবতা নিয়ে এনজিওগুলোর অতিরিক্ত চাপ এবং শিল্পে ‘গ্রিন সনদ’ পেতে জটিল প্রক্রিয়া এই খাতকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০২১ সালেই ৩০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ১৫০টি কারখানার মধ্যে মাত্র ৭টি ‘গ্রিন ইয়ার্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং আরও ১৭টি কারখানা এখনো সে প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যদিও শিল্প মন্ত্রণালয় ১০৫টি কারখানাকে পরিবেশবান্ধব করার অনুমোদন দিয়েছিল।
শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো দেশের ইস্পাত শিল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু জাহাজ আমদানিতে এলসি করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন ব্যাংকের কঠিন শর্তের মুখে পড়ছেন। ফলে অনেক ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি হয়ে দেউলিয়া হয়েছেন, কেউ কেউ আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের শীর্ষ জাহাজভাঙা দেশ, সেই সময়ে এ খাত থেকে বার্ষিক ১,২০০–১,৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হতো। বর্তমানে বাংলাদেশের নাম বৈশ্বিক র্যাংকিংয়েই নেই।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিদেশি এনজিওগুলো পরিকল্পিতভাবে এই শিল্পকে ধ্বংস করছে। পরিবেশের দোহাই দিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এখনই সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ এবং নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।