ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে স্থায়ী ক্ষতি এড়াতে টেলিভিশনসহ ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিনের সংস্পর্শ থেকে বিরত রাখা উচিত বলে সতর্ক করেছেন ফরাসি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিকস, পাবলিক হেলথ, অপথ্যালমোলজি, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি এবং হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট—এই পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এক খোলা চিঠিতে ফরাসি সরকারকে অনুরোধ করেছে, শিশুদের স্ক্রিন এক্সপোজার কমাতে দ্রুত নীতিমালা গ্রহণ করা হোক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, টেলিভিশন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ভিডিও গেমস এবং স্মার্টফোন তরুণ প্রজন্মের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো ধরনের স্ক্রিন শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে দেখা দিতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক ঘাটতি ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
তারা সুপারিশ করেছেন, তিন বছর বয়সের আগে কোনো শিশুকে স্ক্রিনের সামনে বসানো উচিত নয়। তিন থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের উপস্থিতিতে সীমিত সময়ের জন্য স্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি, ঘর ও স্কুল—দুই জায়গাতেই স্ক্রিন ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকরা দেখতে পাচ্ছেন, নিয়মিত স্ক্রিন ব্যবহারের কারণে শিশুদের মধ্যে ভাষা বিলম্ব, মনোযোগের ঘাটতি এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর ফলে তাদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা গোটা সামাজিক কাঠামোকে প্রভাবিত করছে।
চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়, “যদি ছয় বছরের কম বয়সী শিশুকে একা রাস্তা পার হতে দেওয়া না হয়, তবে কেন তাকে স্ক্রিনের সামনে বসতে দেওয়া হচ্ছে, যখন এটি তার স্বাস্থ্য ও বৌদ্ধিক ভবিষ্যতের ক্ষতি করে?”
২০২3 সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আদেশে গঠিত এক কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ সালে তিন থেকে ছয় বছর বয়সী ফরাসি শিশুরা দৈনিক গড়ে ১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট স্ক্রিনের সামনে সময় কাটিয়েছে। সে সময় প্রস্তাবিত সুপারিশগুলোর মধ্যে কেবল একটি বাস্তবায়িত হয়েছে—তিন বছরের কম বয়সীদের স্ক্রিন এক্সপোজারে নিরুৎসাহিত করা।
এছাড়া দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আত্তাল ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য রাত ১০টার পর এসব মাধ্যম ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের কথাও বলেছেন।