আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও প্রযুক্তিনির্ভরতায় অনেকেই নিয়মিত রাত জাগেন। তবে বিজ্ঞানের তথ্যে দেখা গেছে, অতিরিক্ত রাত জাগা শরীর ও মনের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
প্রথমত, রাত জাগার ফলে শরীরের স্বাভাবিক ঘুমচক্র বা সার্কেডিয়ান রিদম (Circadian Rhythm) ব্যাহত হয়। এই চক্রটি হরমোন নিঃসরণ, শরীরের তাপমাত্রা ও ঘুম-জাগরণের সময় নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুম না হলে মেলাটোনিন নামক হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যার ফলে ঘুমের গুণগত মান হ্রাস পায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, রাতে ঘুম না হলে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে। নিয়মিত ঘুম না হলে শেখার দক্ষতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়।
তৃতীয়ত, দীর্ঘ সময় রাত জাগলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। ঘুমের অভাবে ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ায় ওজন বাড়ার আশঙ্কাও থাকে।
রাত জাগা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে তোলে। ঘুমের সময় শরীর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী প্রোটিন তৈরি করে, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ঘুমের ঘাটতিতে এই কার্যপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
সবশেষে, চোখের ওপর রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, দৃষ্টি ঝাপসা হয় এবং জ্বালা ভাব দেখা দেয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অতিরিক্ত রাত জাগা কেবল সাময়িক ক্লান্তি নয়—বরং এটি ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম অপরিহার্য।