Ridge Bangla

তারিক সিদ্দিক ও তার স্ত্রীর নামে শত কোটি টাকার সম্পদ, অনুসন্ধানে দুদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী শাহিদ সিদ্দিকের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য উদঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় তাঁদের মালিকানাধীন বাড়ি, জমি ও অন্যান্য সম্পদ রয়েছে, যার আনুমানিক দলিলমূল্য ৩৮ কোটি টাকারও বেশি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এসব সম্পদের প্রকৃত বাজারমূল্য আরও অনেক গুণ বেশি।

দুদকের অনুসন্ধান এখনও চলমান এবং কর্মকর্তারা ধারণা করছেন সামনে আরও সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসবে। ব্যাংক হিসাবে অর্থ সংরক্ষণ ও লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিপুল স্থাবর সম্পদের তালিকা

দুদক সূত্রে জানা যায়, তারিক সিদ্দিকের নামে গাজীপুরে রয়েছে দুটি বাগানবাড়ি। ঢাকার গুলশানে একটি সাততলা ভবন এবং বসুন্ধরা আবাসিকে তিনটি প্লট রয়েছে। বারিধারায় রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট ও আরেকটি ফ্ল্যাটের আংশিক মালিকানা। গাজীপুরে একটি বাড়ির এক-চতুর্থাংশ অংশ এবং প্রায় ৪৮ বিঘা জমি রয়েছে তাঁদের দখলে।

দুদক এখন পর্যন্ত ২৪ বিঘা জমি ও পাঁচটি ফ্ল্যাট জব্দ করেছে আদালতের আদেশে। বিদেশে সম্পদ আছে কি না, তা অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (BFIU) চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গোপনে প্রস্থান, মামলা ও অভিযোগ

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই তারিক সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তাঁরা দেশ ছেড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে সহিংসতা, গুম, ও দুর্নীতির অভিযোগ।

দুদক জানিয়েছে, তারিক সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে শত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্জন করা।

রয়েছে বাগানবাড়ি

গাজীপুরের ফাওকাল এলাকায় রয়েছে ডুপ্লেক্স ভবনসহ একটি বাগানবাড়ি। দলিল অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৫.৪ বিঘা হলেও স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে জমির পরিমাণ তার চেয়ে অন্তত চার গুণ বেশি। ওই একই এলাকায় ‘বাগানবিলাস’ নামে আরও একটি বিলাসবহুল বাগানবাড়ি রয়েছে তাঁর। সেখানেও রয়েছে বড় পুকুর, দোতলা ভবন ও ওয়াচ টাওয়ার। দুই বাড়িতেই অভ্যুত্থানের পর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

জমি কেনাবেচায় গড়মিল

তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরে অনেক জমি কিনেছেন দলিলে কম মূল্যে দেখিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে প্রতি শতাংশ জমির বাজারমূল্য ৮-১০ লাখ টাকা, সেখানে তিনি দেখিয়েছেন মাত্র ৫৩ হাজার টাকা। একটি জমি তিনি এক আবাসন কোম্পানির সঙ্গে বিনিময় করেছেন।

যার বাজারমূল্য ও দলিলে দেখানো মূল্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। একটি জমি নিয়ে বিশ্বাস বিল্ডার্স নামের এক কোম্পানির সঙ্গে বিরোধও ছিল, যা পরবর্তীতে দখলমুক্ত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চারটি দুর্নীতি মামলা

তাঁর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত চারটি দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক। যেগুলো ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা হয়।

এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে ৮১২ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প থেকে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।

আরো পড়ুন