আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘুরেও ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না অনেক বিচারপ্রার্থী। দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারকের অনুপস্থিতি এবং নির্ধারিত সময় মেনে কার্যক্রম না চালানোর ফলে মামলার জট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এতে সাধারণ মানুষ সময় ও অর্থ ব্যয় করে হতাশার মুখে পড়ছেন।
ভুক্তভোগীদের একজন ঢাকার দোহারের শারমিন আক্তার। তিনি ২০২২ সাল থেকে সন্তানের ভরণপোষণ ও কাবিনের দাবিতে ঢাকার প্রথম পারিবারিক আদালতে মামলা করেছেন। তিন বছরের বেশি সময়েও বিচার পাননি। ধার্য দিনে আদালতে গিয়ে শুনানি না হওয়ায় বারবার ফিরতে হচ্ছে তাকে। কখনো বিচারক ছুটিতে, কখনো আদালতই বসছে না কোনো ঘোষণা ছাড়াই।
শারমিনের মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও অনেকের। কেরানীগঞ্জের মুল্লুক চান জানান, তার জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় টানা তিনটি তারিখেও শুনানি হয়নি। শরিয়তপুরের রিমা আক্তার জানান, স্বামী মিরাজের বিরুদ্ধে করা খোরপোষ মামলার রায়ের জন্য তিনি সাত বছর ধরে আদালতের দ্বারে ঘুরছেন।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অধিকাংশ বিচারক এজলাসে ওঠেন বেলা ১১টার পর। কেউ কেউ ওঠেন দুপুরে, আবার কোনো কোর্টে শুনানির মামলাই না থাকায় বিচারক আসেন না। ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসেও একই ধীরগতি দেখা গেছে।
টিআইবির ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে বিচারকদের সময়মতো এজলাসে না ওঠার চিত্র উঠে আসে। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের কঠোর নির্দেশনার পরেও বাস্তবে তার প্রভাব স্পষ্ট নয়। অনেক বিচারক সময়মতো এজলাসে না গিয়ে খাস কামরায় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, আদালতের কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। বিচারকরা ফাইলের কাজ ও আদেশ লেখায় সময় নেন বলেও তিনি জানান। তবে মামলার জট কমাতে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
আইনজীবীরা বলেন, সময়মতো বিচারকরা এজলাসে উঠলে শুনানি গতি পায়, সাক্ষ্যগ্রহণে সুবিধা হয়, এবং মামলার তারিখ এগিয়ে এনে দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয়। বর্তমানে দেশের আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৪ লাখের বেশি। বিচারক সংকট, সময় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও প্রশাসনিক জটিলতায় এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বিচারক, আইনজীবী ও কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, সময় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও দায়বদ্ধতার অভাব বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার থেকে দূরে রাখছে। আদালতের নির্ধারিত সময় মেনে চলা, নিয়মিত শুনানি এবং দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলার দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।