তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইপ এরদোয়ান টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন। দেশজুড়ে বাড়ছে এরদোয়ান-বিরোধীদের অসন্তোষ। ইস্তাম্বুলসহ দেশের প্রতিটি শহরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভকারীদের দমাতে শহরগুলোতে চলছে ক্র্যাকডাউন। এরই মধ্যে ১৪০০ এর বেশি আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু আন্দোলনকারী নয়, সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা বিবিসি ও এএফপি-সহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকদেরও আটক করা হয়েছে।
ঘটনার শুরুটা মূলত ১৯ মার্চ দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতারের মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৮ সালে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলের মনোনীত প্রার্থী ইমামোগলুকে আগেভাগেই পথ থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন এরদোয়ান। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে তিনি এবং তার প্রশাসন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

তবে ইমামোগলুকে গ্রেফতারের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ইস্তাম্বুল, আঙ্কারাসহ দেশটির বড় শহরগুলো। রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের স্বেচ্ছাচারী শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নেমেছে জনতা। এরদোয়ান-প্রশাসন বিক্ষোভ দমাতে আন্দোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
পাশাপাশি বিক্ষুব্ধদের মধ্য থেকে ১৪০০ এর বেশি আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়েছে। বিবিসি, এএফপি সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কমপক্ষে ৬ জন সাংবাদিককে আটকের পর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া বলেছেন, সরকার এই আন্দোলনকে অবৈধ মনে করছে। বর্তমানে ৯৭৯ জন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে রাখা হয়েছে, ৪৭৮ জনকে আদালতে তোলা হবে।
ইয়েরলিকায়া সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেছেন, “যারা রাস্তায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, আমাদের জাতীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং আমাদের পুলিশ অফিসারদের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে, তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।”
এদিকে, তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা শনিবার ইস্তাম্বুলে একটি সমাবেশের পরিকল্পনা করছে।
উল্লেখ্য, দেশটির শক্তিশালী নেতা এরদোয়ান ২০০৩ সাল থেকে তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন। তিনি প্রথমে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে ২০১৪ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৭ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে এরদোয়ান রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সম্প্রসারিত করেন।