২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মামলায় হাইকোর্টে খালাস পাওয়া ৪৯ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানির তারিখ ধার্য করেছে আপিল বিভাগ। আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এই বহুল আলোচিত মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আর বিএনপির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামালসহ অন্যান্য আইনজীবীরা।
হাইকোর্ট গত ১৪ জুলাই মামলার রায়ে বলেন, সম্পূরক অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আইনবহির্ভূত ছিল, এবং ম্যাজিস্ট্রেটের পরিবর্তে বিচারিক আদালতে চার্জশিট আমলে নেওয়ায় পরবর্তী পুরো বিচারপ্রক্রিয়া অবৈধ ছিল।
মামলার ইতিহাস অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ওই হামলায় ২৪ জন নিহত ও প্রায় ৩০০ জন আহত হন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। পরে দুটি মামলা হয়—একটি হত্যা, আরেকটি বিস্ফোরক আইনে।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২২ জনকে আসামি করে প্রথম অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তদন্তে আরও ৩০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তারেক রহমানসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলায় রায় ঘোষণা করে। রায়ে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের রায়ে এই ৪৯ জন আসামির সবাই খালাস পান। খালাস পাওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, এনএসআই-ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তারা, মুফতি হান্নানের ভাইসহ হরকাতুল জিহাদ সংশ্লিষ্ট অনেকে।
এই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে, যা আপিল বিভাগ গ্রহণ করে। এখন সেই আপিলের প্রথম শুনানি হতে যাচ্ছে ১৮ জুলাই। রাজনৈতিক ও বিচারিক দিক থেকে এই মামলাটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।