Ridge Bangla

শেখ হাসিনার বিচারের পর্যায়ক্রম ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রতিবেদন

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী গণআন্দোলন দমনের সময় পরিকল্পিত সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যাদের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ছিল শিশু।

এই বিচার দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ব্যাপক মনোযোগ পায়। এএফপি, আল জাজিরা, ও ভারতীয় গণমাধ্যম Kroll India–সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে কভার করেছে।

অভিযোগের বিবরণ

আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সহিংস দমন অভিযান ছিল সমন্বিত, বিস্তৃত ও পর্যায়ক্রমিক। শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা, উসকানি, সহযোগিতা এবং প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রসিকিউটরদের দাবি, তাদের হাতে রয়েছে ভিডিও ফুটেজ, অডিও রেকর্ডিং, ফোনালাপ, ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার সংক্রান্ত দলিল এবং ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য। বিশেষ করে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশের অভিযোগ উঠেছে।

বিচার ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন এবং এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর আইসিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই বিচারকাজ শুরু করে। মামলার শুনানি শুরু হয় ২৫ মে।

৫ আগস্টের এক ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ছয় বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর অভিযোগে আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এটি সেই একই ট্রাইব্যুনাল, যেখান থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয় এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়—যা একসময় বিচারপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

AFP জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রয়েছে ফোনালাপ, হেলিকপ্টার ও ড্রোনের ব্যবহার সংক্রান্ত নথিপত্র ও ভিডিও ক্লিপ, যা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

Al Jazeera তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, শেখ হাসিনার সরকারের ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলন দমন ছিল পরিকল্পিত এবং ধারাবাহিক সহিংসতার অংশ। অভিযুক্তরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সশস্ত্র সদস্যদের ব্যবহার করেছে। তারা শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কেও জানিয়েছে যে তিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

Kroll India উল্লেখ করেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন আঞ্চলিক রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। তাদের মতে, বিচার শুরু হওয়ার পর এই মামলাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক উত্তেজনাও বেড়েছে।

প্রসিকিউটরের বক্তব্য

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এই বিচার কোনো প্রতিশোধ নয়। এটি ন্যায়বিচারের জন্য। গণতান্ত্রিক দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো স্থান নেই।”

আরো পড়ুন