অ্যাপলকে পিছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির স্থান দখল করেছে মাইক্রোসফট। চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অ্যাপলের শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ায় এই পরিবর্তন ঘটে। সেই সুযোগে প্রযুক্তি খাতে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করে শীর্ষে উঠে এসেছে মাইক্রোসফট।
সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে টানা চার দিন অ্যাপলের শেয়ারদর ব্যাপক হারে কমতে থাকে। এতে কোম্পানিটির বাজারমূল্য নেমে আসে ২.৫৯ ট্রিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২.৬৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.২৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যেখানে অ্যাপলের বাজারমূল্য ৩.০৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন শুল্কনীতি। শতাধিক দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা আরও সতর্ক হয়ে উঠেছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাপল, কারণ তাদের উৎপাদন ব্যবস্থার একটি বড় অংশ চীনের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট তুলনামূলকভাবে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে, বিশেষ করে ক্লাউড প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যারের উচ্চ চাহিদার কারণে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মাইক্রোসফট ৭ হাজার কোটি ডলার আয় করেছে, যা বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৩.৪৬ ডলার।
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা বলেন, কোম্পানির এই শক্তিশালী আয় বৃদ্ধির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে তাদের ক্লাউড ব্যবসা। শুধু এই খাত থেকেই আয় হয়েছে ২ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এই আয় বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ২ হাজার ৬১৭ কোটি ডলারকেও অতিক্রম করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের শুরুতেও মাইক্রোসফট সাময়িকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির অবস্থান দখল করেছিল। তবে সে সময় অ্যাপল দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে শীর্ষস্থানে ফিরে আসে। এবারের পরিস্থিতিতে অ্যাপলের চীনের ওপর নির্ভরতা তাদের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বাজারমূল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।