Ridge Bangla

আরব বসন্তের সূতিকাগার তিউনিসিয়ায় কি ফিরছে কর্তৃত্ববাদী শাসন!

আরব বসন্তের সূতিকাগার তিউনিসিয়া আবারও আলোচনায় এসেছে গণবিচারে আদালতের দেওয়া রায়কে কেন্দ্র করে। দেশটির আদালত সম্প্রতি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কঠোর রায় দিয়েছে। বিরোধীরা বলছে, এসব রায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল এবং প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন।

গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক আদালত ব্যবসায়ী কামেল লতায়েফকে ৬৬ বছর এবং বিরোধী রাজনীতিবিদ খায়াম তুর্কিকে ৪৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এ ছাড়া গাজী চৌয়াচি, ইসাম চেব্বি, জওহর বেন এমবারেক এবং রিধা বেলহাজসহ একাধিক বিরোধী নেতাকে ১৮ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ২০২৩ সাল থেকে তারা কারাভোগ করছেন। মামলায় অভিযুক্ত ৪০ জনের মধ্যে ২০ জনের বেশি ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ৯০.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হন। তবে ২০২১ সালে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ডিক্রির মাধ্যমে শাসন শুরু করার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার শাসনব্যবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী বলে সমালোচনা করছে। তিনি ২০২২ সালে স্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ভেঙে দিয়ে বিচার বিভাগে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।

রায় ঘোষণার আগে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহমেদ সৌয়াব একে ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, রায় আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। বিরোধীরা বলছে, এই রায় একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে বিরোধী কণ্ঠরোধ ও একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ।

কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিযুক্তরা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এবং তারা প্রেসিডেন্ট সাইয়েদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে প্রধান বিরোধী জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্টের নেতা নাজিব চেব্বি দাবি করেছেন, সরকার বিরোধীদের অপরাধী বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।

বর্তমানে তিউনিসিয়ার অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা কারাগারে আছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রি কনস্টিটিউশনাল পার্টির নেতা আবির মুসি ও এন্নাহদা পার্টির প্রধান রাশেদ ঘানুচি—যারা প্রেসিডেন্ট সাইয়েদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া আরব বসন্ত তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্রের যে আশা জাগিয়েছিল, তা আজ অনেকটাই বিলীন। বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের রাজনৈতিক মানসিকতায় পরিবর্তন না এলে তিউনিসিয়া ফের অস্থিরতার মুখে পড়তে পারে।

আরো পড়ুন