বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চামড়া শিল্প। ঈদুল আজহার পর প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, যা প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, পোশাক ও আসবাবপত্রসহ মূল্যবান পণ্য। এসব পণ্য দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনা, কাঠামোগত দুর্বলতা ও নীতিগত সংকটের কারণে এই শিল্প আজ মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পরও এখনো পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি চালু হয়নি। এর ফলে আন্তর্জাতিক মান পূরণ না হওয়ায় ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে চামড়া রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি মৌসুমি ও অপ্রশিক্ষিত ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে চামড়া উৎপাদকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তান চামড়া শিল্পে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করেছে। অপরদিকে, বাংলাদেশে দক্ষ শ্রমিকের অভাব, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশনের ঘাটতি ও দুর্বল নীতি বাস্তবায়নের কারণে বিদেশি ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে দরকার দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ। এর মধ্যে রয়েছে:
-
ট্যানারি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়ন
-
প্রতিটি জেলায় চামড়া সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন
-
বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা ও দালালমুক্ত ব্যবস্থা
-
প্রসেসড লেদার ও প্রস্তুত পণ্য রপ্তানিতে জোর দিয়ে আফ্রিকা, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ নতুন বাজারে প্রবেশ
-
কারিগরি প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা
চামড়া শিল্প কেবল একটি শিল্প নয়, এটি লাখ লাখ মানুষের জীবিকার উৎস এবং জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তাই এই শিল্প রক্ষায় এখনই চাই সমন্বিত, সুপরিকল্পিত এবং টেকসই উদ্যোগ।