Ridge Bangla

ফিরে দেখা রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলো | ১ আগস্ট ২০২৪

স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট সময়কাল এক নাটকীয় পরিবর্তনের পর্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। গত বছরের এই সময়ের ঘটনাপ্রবাহে ফিরে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায়, কীভাবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা একদিনেই দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল।

২০২৪ সালের ১লা আগস্ট ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে মুক্তি পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। তাদের মধ্যে তিনজনকে ছয় দিন, দুজনকে পাঁচ দিন এবং একজনকে চার দিন আটক রাখা হয়েছিল। মুক্তির পর ডিবি পুলিশ নিজ উদ্যোগে তাদের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

মুক্তি পাওয়ার পর আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “ছয়জনকে ছয় দিন আটকানো সম্ভব, কিন্তু দেশের তরুণ প্রজন্মকে আটকে রাখা যাবে না। যতদিন গণগ্রেফতার, জুলুম ও নির্যাতন চলবে, ততদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও চলবে।”

এই দিন সহিংসতা ও হত্যার প্রতিবাদে শিল্পীরাও রাজপথে নামেন। সব হত্যার বিচার এবং চলমান সহিংসতা, গণগ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে তারা মানববন্ধনের ঘোষণা দেন। সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মানববন্ধন হওয়ার কথা থাকলেও সকাল পৌনে ১১টার দিকে খামারবাড়ি মোড়ে এসে পুলিশি বাধায় আটকে পড়েন তারা।

পরে সংসদ ভবনের পথে বাধা পেয়ে বৃষ্টিভেজা অবস্থায় শিল্পীরা ফার্মগেট সেজান পয়েন্টে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন। তাদের এই বৃষ্টিভেজা প্রতিবাদ মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশব্যাপী আলোড়ন তোলে।

একই দিনে বিকেলে সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সহিংসতা, হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জামায়াত-শিবির সরাসরি জড়িত এবং উস্কানি দিয়েছে—এমন পর্যাপ্ত প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, জামায়াত, শিবির ও তাদের অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত।

এদিকে সহিংসতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পাঠানোর প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘ।

ছাত্রনেতাদের মুক্তি, শিল্পীদের রাজপথে প্রতিবাদ, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ এবং জাতিসংঘের তদন্ত প্রস্তাব—সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের ১লা আগস্ট দিনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিশেষ গুরুত্ববাহী দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আরো পড়ুন