জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে গোপালগঞ্জে পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সহিংসতার জেরে বিকেলেই পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষ হতেই চারদিক থেকে সশস্ত্র লোকজন এসে এনসিপির গাড়িবহর ঘিরে ফেলে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে নেতাকর্মীরা বিকল্প পথে গাড়ি ঘুরিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা রওনা হতেই গ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন এসে আমাদের ওপর চড়াও হয়। প্রশাসন আগেই বলেছিল পরিস্থিতি শান্ত, কিন্তু পুলিশের ভূমিকা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল।”
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কে সমাবেশ চলাকালে ছাত্রলীগের হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এনসিপির অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাদের মঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করেছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সকালেও পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর এলাকায় ইউএনওর গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। এর আগে উলপুরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়ে অগ্নিসংযোগ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অবস্থান নেয়। কোটালীপাড়া সড়ক, টেকেরহাট সড়ক ও টুঙ্গিপাড়ায় এপিসি মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি জানান, এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে নাশকতার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নামে একটি পথসভা আয়োজন করা হয়েছিল, যা ছিল মাসব্যাপী কর্মসূচির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।