Ridge Bangla

উত্তরা থানার ওসিকে হুমকি: পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার ফোনালাপ ফাঁস, দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া

রাজধানীর উত্তরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন এক পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা। সম্প্রতি এই অডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উগ্র ও সহিংস বক্তব্যে ভরা এই ফোনালাপে তিনি আওয়ামী লীগের ভয়ংকর প্রতিশোধের হুমকি দেন। অডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

অডিওটিতে ওই ব্যক্তি নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের একজন কেন্দ্রীয় ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে সাময়িকভাবে পিছিয়ে থাকলেও আবার ‘ভয়ংকর রূপে’ ফিরে আসবে। তার ভাষায়, “আওয়ামী লীগ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পেয়েছে, কিন্তু জামায়াত-বিএনপিকে এমন সুযোগ দেওয়া হবে না। সময় মতো তারা ফিরে এসে সব প্রতিপক্ষকে ‘মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে।’”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমাদের কিছু নেতা-কর্মী মারা গেছে, এটা বড় কিছু নয়। সাড়ে তিন কোটির বেশি নেতাকর্মী এখনও জীবিত আছে। তারা সবাই একসাথে উঠলে কারো রক্ষা থাকবে না।” উত্তরা থানার ওসিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “আপনারা এখন যা করছেন, সব কিছু লিপিবদ্ধ হচ্ছে। সময়মতো এর হিসাব চাওয়া হবে। আওয়ামী লীগ কখনো কাউকে ভুলে না, কাউকে ছাড় দেয় না।” ফোনালাপের এক পর্যায়ে একাধিকবার অশ্লীল ভাষা, গালিগালাজ এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেন তিনি।

এই কথোপকথনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ব্যক্তিগত রাগ এবং সহিংসতার প্রবল ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ একে আওয়ামী লীগের ভেতরের সন্ত্রাসী মানসিকতার নগ্ন প্রকাশ বলে অভিহিত করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, এটি বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের প্রতিফলন এবং ভবিষ্যতে আরও সংঘাতের ইঙ্গিতবাহী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের উগ্র বক্তব্য একটি সংগঠনের অন্তর্নিহিত সহিংস প্রবণতা ও অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। এতে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অডিওর উৎস ও সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা বলছে, “কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”

ঘটনার পর এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের দায় দলীয়ভাবে এড়ানো সম্ভব নয়, এবং দলীয় শৃঙ্খলার দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি।

সামাজিক অস্থিরতার এই সময়ে এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল মহলের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা—এই ধরনের সহিংস ও উগ্র মনোভাবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

আরো পড়ুন