Ridge Bangla

জুলাইয়ের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হবে

৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিন ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানে অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছর ৭ মাসের একদলীয় স্বৈরশাসনের। সহস্রাধিক মানুষের প্রাণের বিনিময়ে পতন ঘটে ক্ষমতাসীন সরকারের, যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতা হারিয়ে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। একই পরিণতি হয় তার সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের; কেউ পালিয়ে যান, কেউ আত্মগোপনে চলে যান।

স্বৈরাচারী এই শাসনব্যবস্থায় বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে শুধু বিরোধী রাজনৈতিক মত দমন করা হয়নি, সাধারণ মানুষকে নিপীড়নের মধ্য দিয়ে পিষ্ট করা হয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাট ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের চরম নজির স্থাপন করে শাসকগোষ্ঠী দেশে এক গভীর বৈষম্যমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। নাগরিকরা ছিল বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নামিয়ে আনা হতো দমন-পীড়নের যন্ত্র। বিচার ব্যবস্থাও ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।

অস্ত্রের ঝনঝনানি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরঙ্কুশ দমননীতি ও ভয়ের সংস্কৃতি দিয়ে দেশ চালানোর যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, তা ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনের মুখে ভেঙে পড়ে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন থেকেই যে গণআন্দোলনের বীজ রোপণ হয়েছিল, তা অচিরেই রূপ নেয় সর্বাত্মক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার অদম্য ঢেউ প্রতিহত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসারকে অস্ত্র ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দমনযন্ত্র ব্যর্থ হয়। জয় হয় জনগণের।

৫ আগস্ট এই দিনটি শুধু একটি সরকারের পতনের স্মারক নয়, এটি প্রতীক বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক চেতনার জাগরণের। এই দিনে আমরা প্রত্যয় গ্রহণ করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, মানবিক ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সবাই মিলে কাজ করব। জুলাইয়ের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ভবিষ্যতের একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের দিকে। যেখানে থাকবে না শোষণ, থাকবে না ভয়, থাকবে না নিপীড়ন। থাকবে কেবল স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে গড়া একটি গণতান্ত্রিক সমাজ।

আরো পড়ুন