Ridge Bangla

শেষ বার্তায় যা লেখেন নিহত আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের একজন আনাস আল-শরীফ গাজায় চলমান পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার অন্যতম বলিষ্ঠ কণ্ঠ ছিলেন।

দখলদার বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার আগে গাজা নিয়ে শেষ আবেগঘন বার্তা দিয়ে গেছেন তিনি। ওই বার্তায় আল-শরীফ গাজাকে ভুলে না যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার (১০ আগস্ট) তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ওই ইচ্ছাপত্রে তিনি লিখেছেন, নিজের সর্বশক্তি ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়েছেন ‘নিজের জনগণের কণ্ঠস্বর ও সহায়তায় নিযুক্ত মানুষ হতে।’

তিনি লেখেন, “আমার আশা ছিল আল্লাহ আমাকে দীর্ঘ জীবন দেবেন, যাতে আমি পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে আমাদের দখলকৃত আসকালান (আল-মাজদাল) শহরে ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই চূড়ান্ত। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষণে বেদনা অনুভব করেছি, বহুবার কষ্টের স্বাদ পেয়েছি, তবুও সত্যকে বিকৃত না করে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো দ্বিধা করিনি।”

নিজের মৃত্যুর পর সন্তানদের, বিশেষ করে কন্যা ও ছেলের যত্ন নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, “তাদের পাশে থাকুন, আল্লাহর পর আপনি-ই হোন তাদের ভরসা। আমি যদি মৃত্যুবরণ করি, তবে নিজের নীতিতে অটল থেকেই করব।”

বার্তায় তিনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানান, ফিলিস্তিন ও এর জনগণের পাশে থাকার জন্য, বিশেষ করে নিরপরাধ শিশুদের জন্য। নীরব না থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই যেন ফিলিস্তিনের মুক্তির সেতুবন্ধন হয়ে ওঠেন।

তিনি লিখেছেন, “আমি তোমাদের হাতে অর্পণ করছি ফিলিস্তিনকে—এটা মুসলিম বিশ্বের মুকুটমণি, বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন মানুষের হৃদস্পন্দন। আমি তোমাদের হাতে অর্পণ করছি এর জনগণকে, নিরপরাধ সেই শিশুদের, যারা কখনো স্বপ্ন দেখার বা নিরাপদে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়নি।”

তিনি আরও বলেন, “শিকল যেন তোমাদের নীরব না করে, সীমান্ত যেন আটকে না রাখে। ভূমি ও মানুষের মুক্তির পথে সেতু হয়ে ওঠো, যতক্ষণ না আমাদের চুরি যাওয়া মাতৃভূমিতে মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়।”

নিজের এই উইলে তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করা হয় এবং গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। শেষ লাইনে তিনি লিখেন, “গাজাকে ভুলে যেও না… আর তোমাদের আন্তরিক দোয়ার মধ্যে আমাকে ভুলে যেও না।”

আরো পড়ুন