১৬ জুলাই ২০২৪, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এদিন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে সারা দেশে নেমে আসে সহিংসতার ঘনঘটা। আপিল বিভাগে কোটা সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের লিভ টু আপিল দায়েরের পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
রাজধানী থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। বিক্ষোভের মুখে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষ ও দমন-পীড়নের ঘটনায় এদিন অন্তত ছয়জন প্রাণ হারান, যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম মুখ আবু সাঈদ।
আবু সাঈদের মৃত্যুই উত্তাল পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে
সোমবার দুপুরে ঢাকার একটি সড়কে বিক্ষোভ চলাকালে আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় মাত্র ১৫ মিটার দূর থেকে পুলিশ শটগান দিয়ে তাকে গুলি করে। মুহূর্তেই তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। তার মৃত্যুর মর্মান্তিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, সাঈদ কোনো উসকানি দেননি, বরং প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে নিরস্ত্রভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার এমন মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলন আরও বেগবান হয়।
সারাদেশে অচলাবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা
আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং সিলেটে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হলগুলোও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
হলে উত্তেজনা ও ছাত্রলীগ বিরোধী প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবাসিক হলে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ থেকে বের করে দেন এবং তাদের রুমে ভাঙচুর চালান। সারা রাতজুড়ে বিভিন্ন হলে অস্থিরতা দেখা দেয়। অভিভাবকরা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে পড়েন।
আন্দোলনকারীদের ঘোষণা
আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন, সহপাঠী আবু সাঈদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তারা “নিরাপদ ক্যাম্পাস”, “ন্যায়বিচার” এবং “রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের অবসান”-এর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রশাসনের সতর্কতা
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে সতর্ক অবস্থানে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এই দিনটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে আরেকটি রক্তাক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।