Ridge Bangla

বিষাক্ত বর্জ্যে মৃতপ্রায় তুরাগ: শিল্পদূষণে ধ্বংসের পথে ঐতিহ্যবাহী নদী

এক সময়ের প্রাণবন্ত ও ঐতিহ্যবাহী তুরাগ নদ আজ প্রায় মৃতপ্রায়। ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই নদীটি এখন রঙিন বিষাক্ত বর্জ্যে রূপ নিয়েছে এক দুর্গন্ধযুক্ত কালো নালায়। কোথাও কেমিক্যালযুক্ত পানির দুর্গন্ধ, কোথাও আবার স্তূপ করা আবর্জনা—সব মিলিয়ে নদীর অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে।

ইতিহাস বলছে, মোগল আমলে তুরাগ ছিল গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ, শাহবন্দরও ছিল এর তীরে। অথচ আজকের তুরাগ কেবল বিষাক্ত তরলের ধারক। পরিবেশবিদরা বলছেন, টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্যই এই নদীর মৃত্যু ডেকে এনেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিক এলাকার শতাধিক ওয়াশিং ও ডাইং কারখানার অধিকাংশেরই নেই কার্যকর ইটিপি (Effluent Treatment Plant)। অধিকাংশ কারখানা সরাসরি কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ফেলে দিচ্ছে তুরাগে। ফলে নদীতে শ্বাস নেয় না কোনো জলজপ্রাণী, শুধু বেড়ে চলেছে দূষণ।

নুরুল ইসলাম, এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “আগে নদীতে রুই, কাতলা, বোয়াল পাওয়া যেত। এখন শুধু ময়লা খাওয়ার সাকার ফিশ। নদীর ধারে দাঁড়ানোই যায় না।”

শিরিন আক্তার নামের আরেকজন জানান, “কারখানাগুলো কোনো পরিশোধন ছাড়াই পানি ফেলছে। আমাদের পরিচিত নদী আজ দূষণের নর্দমা।”

ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ওয়াশের এক সাবেক কর্মী জানান, “পরিদর্শনের সময় সাময়িক কিছু দেখানো হয়, বাকি সময় সব বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়।”

বিসিকের সহকারী ব্যবস্থাপক (পরিচালন) জামিল হোসাইন জানান, “ইটিপি ছাড়া কারখানাগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটিপি ছাড়া কারখানা মানে ‘পরিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’। বিষাক্ত তরল নদীতে পড়লে পানির অক্সিজেন কমে যায়, জলজপ্রাণী ধ্বংস হয়, কৃষিজমি বিষাক্ত হয়ে পড়ে।

তাদের দাবি, কেবল নির্দেশনা নয়, দূষণ রোধে চাই কঠোর নজরদারি, নিয়মিত অভিযান এবং দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

আরো পড়ুন