ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ১৩২টি গ্রামে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, এবং এখনও অনেক মানুষ আশ্রয়হীন অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে বা অন্যের আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরামে ৪৯টি ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। আরও ৮৬৮টি ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—ফুলগাজীতে ৪৯৫টি, ছাগলনাইয়ায় ৩০৪টি এবং পরশুরামে ৬৯টি।
এছাড়া, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। ফুলগাজীর ৬৭টি, পরশুরামের ৪৪টি এবং ছাগলনাইয়ার ১৫টি গ্রাম এখনও পানির নিচে। কিছু এলাকায় ঘরের ছাদ পর্যন্ত পানি উঠে গেছে।
ফুলগাজীর বাসিন্দা হোসনে আরা বেগম বলেন, “সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। তিন সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। এখন ফিরে এসে দেখছি বসবাসের কোনো ব্যবস্থা নেই।”
বন্যায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে ৪১টি স্থানে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কিছু ত্রাণ বিতরণ করলেও পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের উদ্যোগ এখনও শুরু হয়নি।
ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি বন্যায় জেলায় এক লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চলতি বছর বন্যায় কৃষি, মৎস্য, সড়কসহ বিভিন্ন খাতে মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের বন্যায় এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৩৩ কোটি টাকার বেশি।