২০২৪ সালের ২১ জুলাই—বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত ও বিতর্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ।
রবিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ একটি যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে ৯৩% পদ মেধা ভিত্তিতে এবং ৭% পদ কোটাভিত্তিক নিয়োগ হবে। এর মধ্যে—
-
মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৫%
-
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১%
-
প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য ১% কোটা নির্ধারণ করা হয়।
আদালত রায়ে উল্লেখ করে, কোটাব্যবস্থা সংবিধানসম্মত এবং বৈষম্য হ্রাসে এটি একটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। তবে সরকার প্রয়োজন হলে কোটা পুনর্বিন্যাস বা সংশোধনের এখতিয়ার রাখে বলেও জানানো হয়।
রায়ের পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ দেশের প্রায় প্রতিটি শহরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। সকাল থেকেই চলে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশে কারফিউ জারি রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, শিল্প কারখানা, পোশাক কারখানা এমনকি সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ, র্যাব এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
যদিও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে, আন্দোলনকারীরা এর বিরোধিতা করে বলেন—সরকারি চাকরিতে শতভাগ মেধা ভিত্তিক নিয়োগ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।