ফৌজদারি মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি রোধে নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই ‘অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন’ জমার বিধান চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় সংশোধন করে একটি অধ্যাদেশ আনার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পুলিশের একাধিক সূত্র।
বর্তমানে কোনো মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পুলিশ। তবে দীর্ঘসূত্রতা ও অপর্যাপ্ত প্রমাণের কারণে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হন। এ অবস্থায় তদন্ত চলাকালীন অপরাধে সংশ্লিষ্টতার পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তকে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দায়মুক্তির সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার, জেলা বা বিভাগীয় পুলিশ সুপার চাইলে তদন্ত অগ্রগতির ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে সেই অনুযায়ী অভিযুক্তকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। তবে, এই পদক্ষেপ শুধু নির্দিষ্ট অভিযুক্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, এবং মামলার অন্য অংশের তদন্ত চলবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আইন সংস্কারের অংশ হিসেবে আরও কিছু প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—
-
পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারে জব্দকৃত মালামালের রসিদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা
-
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বাধ্যতামূলক মেডিকেল পরীক্ষা
-
ঘটনাস্থলে সাক্ষী রাখার শর্ত (যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর বাস্তবায়ন নিয়ে মতভেদ রয়েছে)
বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করলেও এর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, “মিথ্যা মামলা ও হয়রানি ঠেকাতে এটি ভালো উদ্যোগ, তবে যেন এটি পুলিশের আরেকটি বাণিজ্যিক অস্ত্র না হয়ে ওঠে।”
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, সরকার আইন সংস্কারে তিনটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে—ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং হয়রানিমুক্ত বিচারপ্রক্রিয়া। তিনি জানান, আগামী এক মাসের মধ্যেই অধ্যাদেশ জারি হতে পারে।