Ridge Bangla

শিশুশ্রম বন্ধে জরুরি কঠোর আইনি পদক্ষেপ

গতকাল খালি গায়ে, ময়লা হাফপ্যান্ট পরে গাড়ি ধুচ্ছিল এক শিশু—নাহিদ। তার বাবা-মা কেউ নেই, নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানাও। ক্ষুধা, ঘুম আর গরম-শীতই নাহিদের পরিচিত বাস্তবতা। গাড়ি ধুয়ে, ফুট-ফরমাশ খেটে কোনোমতে দিন চলে তার। রাত কাটে কোনো দোকানের বারান্দায় কিংবা খুপড়ি ঘরে।

নাহিদের মতোই করিম চা-স্টলে কাজ করে, রহিম কুড়িয়ে বেড়ায় টিন-কৌটা আর লোহা। এরা কেউ স্কুলের নাম শোনেনি, জানে না কোনো বীরের ইতিহাস। তবে সিনেমার নায়ক-ভিলেন তাদের ভালো লাগে, সেই অনুভবেই তারা মানুষ হয়ে ওঠে।

এই শিশুরা শ্রম দিয়ে টিকে আছে। দেশে লাখ লাখ শিশু গৃহপরিচারিকা, দোকান কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক কিংবা গার্মেন্টে কাজ করছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, গৃহপরিচারিকাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই শিশু। অথচ শিশুশ্রম বন্ধে বছরের পর বছর সেমিনার, সভা, বক্তৃতা হলেও বাস্তব পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। বরং শহরের রাস্তায়, দোকানে, হাটে-ঘাটে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছেই।

এর প্রধান কারণ—দারিদ্র্য ও গ্রামীণ অর্থনীতির দুরবস্থা। গ্রাম থেকে শহরমুখী দরিদ্র পরিবারগুলো জীবিকার তাগিদে শিশুদের শ্রমে যুক্ত করছে। মালিকরা সস্তা শ্রমে শিশুদের ব্যবহার করছে। স্কুলছুট শিশুরাও পরিবারকে সহায়তা করতে গিয়ে শ্রমজীবী হয়ে উঠছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কল-কারখানা, নির্মাণকাজ ও পরিবহন খাতে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। অথচ বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। কেউ গাড়ি ধোয়, কেউ কন্ডাক্টরের কাজ করে, কেউ মাল টানে, আবার কেউ নির্মাণসাইটে জোগালি হিসেবে কাজ করছে।

সিলেটের ফারুক নামে এক শিশু রিকশা চালায়। সে আগে চা-স্টলে কাজ করত। মালিকের গালাগালি, কম মজুরি ও শারীরিক কষ্টে রিকশা চালানোকেই এখন সে শ্রেয় মনে করে—তাতে অন্তত কিছু আয় হয়, যা দিয়ে পরিবারকে সাহায্য করা যায়।

এই শিশুরা জানেই না তারা শিশুশ্রমিক। তাদের কাছে তিন বেলা খাবারই প্রধান বিষয়। শিক্ষা, অধিকার কিংবা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের কোনো স্বপ্ন তাদের জীবনে নেই। মূল শিকড় দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্য।

শিশুশ্রম বন্ধে কেবল বক্তৃতা বা দিবস পালন যথেষ্ট নয়। এখনই দরকার বাস্তব, শক্তিশালী আইনি পদক্ষেপ ও কঠোর আইন প্রয়োগ। তা না হলে প্রতিদিন হাজারো নাহিদ, করিম ও রহিম হারিয়ে যাবে বড়দের নিষ্ঠুর পৃথিবীতে—শৈশব হারিয়ে, অধিকার ভুলে।

আরো পড়ুন