মে দিবস বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশের গুলি বর্ষণের পর এই দিনটি ইতিহাসে রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নেয়। শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগের দিনটিই আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশে দিনটি সরকারি ছুটি ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
মে দিবস কেবল ইতিহাসের স্মারক নয়, এটি শ্রমিক শ্রেণির মর্যাদা ও অধিকারের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতার প্রতীক। তবে বাংলাদেশে শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত অংশ হলো নারী শ্রমিকরা।
কৃষি, শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকলেও তারা আজও শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে শোষণের শিকার। লিঙ্গভিত্তিক মজুরি বৈষম্য, নিরাপত্তাহীন কর্মপরিবেশ, সামাজিক ট্যাবু, শিক্ষার অভাব এবং কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনে ভারসাম্যহীনতা নারীদের শ্রমবাজারে পিছিয়ে দিচ্ছে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে, যেখানে প্রায় ৫৫% শ্রমিক নারী, সেখানে মালিকপক্ষের লাভের পেছনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য হলেও তাঁরা পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরি বা সম্মানজনক কর্মপরিবেশ। একইভাবে, বিদেশে কর্মরত অভিবাসী নারী শ্রমিকরাও প্রতিনিয়ত শোষণ, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। তারা অধিকাংশই গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন এবং নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন।
যদিও ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০১৬’ নারী অভিবাসীদের সুরক্ষায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, বাস্তব প্রয়োগ এখনো সীমিত। নারী কর্মীদের সহায়তায় বিদেশে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ, নিরাপদ আবাসন ও মনোসামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
নারী শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কর্মমুখী শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা, প্রজনন ও যৌনস্বাস্থ্যসেবা এবং সর্বোপরি ইতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
মে দিবস আমাদের এই বার্তাই দেয়—শ্রমিক যেন আর শোষণের শিকার না হন, নারী শ্রমিকদের প্রতি হোক সমাজের সম্মান এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতা। তারা যেন তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য পান এবং দেশ গঠনে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন—এটাই হোক আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার।
বিশ্বের সব শ্রমিকের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।