Ridge Bangla

শ্রমিকের শ্রমেই সভ্যতার অগ্রগতির যাত্রা

শ্রমিকের ঘাম, কষ্ট ও নিরব পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে আজকের আধুনিক সভ্যতা। নজরুল ইসলামের “কুলি-মজুর” কবিতার মতো, প্রতিটি ইট, প্রতিটি অবকাঠামোতে লেগে আছে শ্রমিকের প্রাণের স্পর্শ। অথচ সমাজে শ্রমিক ও মালিকের মাঝে বৈষম্য দিন দিন প্রকট হচ্ছে। একদিকে মালিক শ্রেণি কাটায় আরাম-আয়েশে দিন, অন্যদিকে শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মজুরি ও মৌলিক অধিকার থেকে।

শ্রমিক মানেই কেবল কাজ নয়—এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কর্মপরিবেশ, সুরক্ষা, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও সম্মান। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, অর্থাৎ ১ মে, সেইসব শ্রমিকের আত্মত্যাগের স্মারক, যারা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করে প্রাণ দিয়েছেন। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এই আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে বহু শ্রমিক নিহত হন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা যান, যার ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বছরে জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ ক্ষতি হয়। বাংলাদেশেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ২০২৩ সালে দেশে কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন ১,৪৩২ জন শ্রমিক। এর মধ্যে পরিবহন খাতে মারা গেছেন ৬৩৭ জন, নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন এবং দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক ছিলেন ২২০ জন।

বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, যারা মজুরির বিনিময়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তারাই শ্রমিক। দেশে প্রায় ৮৭ শতাংশ শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত, যেমন—রিকশাচালক, কৃষিশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, গৃহকর্মী ইত্যাদি। গার্মেন্টস খাতে কাজ করছেন প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক, যার বড় অংশ নারী। বিবিএস ও বিজিএমইএ-র তথ্যমতে, গার্মেন্টস খাত বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস হলেও এই শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা এখনও পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়নি।

শ্রমিকের হাতে গড়ে উঠছে দেশের অবকাঠামো, অর্থনীতি, শিল্প ও উন্নয়নের ভিত্তি। অথচ সমাজ আজও তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। আমরা বিলাসবহুল ভবনের সৌন্দর্য দেখি, কিন্তু সেই সৌন্দর্যের পেছনে যাদের শ্রম—তাদের কষ্ট, ঝুঁকি, ও নিঃস্বতা ভুলে যাই।

মে দিবস আমাদের শেখায়—শ্রমিকের ঘামই ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভিত্তি। তাই কেবল একদিন নয়, বরং প্রতিদিনই শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

আরো পড়ুন