মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি, সিন্ডিকেটের আধিপত্য ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ফের সামনে এসেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বিগত সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে।
এই অভিযোগ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে উত্থাপিত হয়, যেখানে ৪৫৩টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক স্বাক্ষর করেছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কিছু সাবেক প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ী, যারা পূর্বে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন, তারা এখনো নতুন করে সিন্ডিকেট গঠনের চেষ্টা করছেন। নাম উঠে এসেছে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও।
সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রুহুল আমিন স্বপন ও মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো আমিনকে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬-১৮ ও ২০২২-২৪ সাল পর্যন্ত তারা প্রায় ১২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা আদায় করেছেন। প্রতিটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে লাইসেন্স পেতে দিতে হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা, আর নতুন সিন্ডিকেটে ঢুকতে দাবি করা হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
দাতো আমিন মালয়েশিয়ান আইটি কোম্পানি ‘বেসটিনেট’-এর মাধ্যমে অনলাইন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর একদিকে বাংলাদেশ সরকারকে বোঝানো হয় মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট চায়, অন্যদিকে মালয়েশিয়া সরকারকে বোঝানো হয় বাংলাদেশ সিন্ডিকেট চায়—এইভাবে দুই দেশের শ্রমবাজার জিম্মি হয়ে পড়ে।
ফলে শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি ও হাজার হাজার সাধারণ কর্মী বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত বছর অন্তত ৫০ হাজার কর্মীর ভিসা প্রক্রিয়া শেষ হলেও তারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। যারা গেছেন, তাদের অনেকেই কাজ, বেতন ও বাসস্থানের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ অবস্থায় স্মারকলিপিতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, সমঝোতা স্মারক (MoU) সংশোধন এবং শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এতে দুর্নীতি ও টাকা পাচার বন্ধ করা যাবে, এবং কর্মীরাও কম খরচে বিদেশে যেতে পারবেন।