সিলেটের শান্তিপূর্ণ জনপদ হিসেবে পরিচিত কানাইঘাট উপজেলা সম্প্রতি একের পর এক খুন, অপহরণ ও নিখোঁজের ঘটনায় ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কয়েক মাস ধরে এলাকায় ফৌজদারি অপরাধের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ছোটখাটো ঘটনার জেরেও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে।
সর্বশেষ জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিনের হত্যাকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হত্যার প্রতিবাদে টানা কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে। ঘটনার ৬ দিন পরও কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা কামাল আহমদ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গত আট মাসে কানাইঘাটে সংঘটিত আটটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের রেকর্ড উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ওসি মো. আব্দুল আউয়াল কানাইঘাট থানায় যোগদানের পর থেকেই খুনের ঘটনা বাড়তে থাকে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার সারসংক্ষেপ:
-
৭ নভেম্বর: সুরইঘাটের একটি পুকুর থেকে প্রবাস ফেরত অটোরিকশা চালক ও বিএনপি-ঘনিষ্ঠ রাজনীতিক রেজওয়ান আহমদের মরদেহ উদ্ধার।
-
৮ নভেম্বর: ধলিবিল দক্ষিণ নয়াগ্রামে চাচাতো ভাইয়ের হাতে খুন হন মসজিদের মোতাওয়াল্লি ফয়জুল হোসেন।
-
৩ নভেম্বর: নিখোঁজ হয় শিশু মুনতাহা; ১০ নভেম্বর তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
-
১৩ নভেম্বর: বড়চতুলে শ্বশুরবাড়ির পাশে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় জুবায়ের আহমদের লাশ।
-
১৮ নভেম্বর: দিনে দুটি খুন—বাজারে ছাত্রদল নেতা আব্দুল মোমিন এবং দোকান থেকে আব্দুর রহমান লাল মিয়ার লাশ উদ্ধার।
-
২০ জানুয়ারি: লোভারমুক বাজারের পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সালিক আহমদকে।
-
১০ মার্চ: বসতবাড়ি নিয়ে বিরোধে খুন হন সৌদি প্রবাসী আব্দুল মতিন।
-
১৭ মার্চ: শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে খুন হন কাতার প্রবাসী রশিদ আহমদ; পুলিশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামি সাজু আহমদকে গ্রেপ্তার করে।
এই ধারাবাহিক খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশের দাবি, তারা তদন্ত ও অভিযানে সক্রিয় রয়েছে এবং কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
তবে পুনরায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি জনমনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। এলাকাবাসী প্রত্যাশা করছে, প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে কানাইঘাটে ফেরানো হোক শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ।