Ridge Bangla

নারী-শিশুর ওপর সহিংসতায় জনমনে আতঙ্ক, বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই ভাইরাল হচ্ছে নারী ও শিশুর ওপর নৃশংস নির্যাতনের ভিডিও, যা জনমনে গভীর আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। প্রকাশ্য স্থানে নারীকে মারধর, শিশু অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা সমাজে নারীর নিরাপত্তাহীনতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পরিবেশগত নেতিবাচক পরিবর্তন, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব এবং অপরাধের পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি—এসবই অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অপরাধীরা নিজের দোষ সম্পর্কে কোনো অনুশোচনাও অনুভব করছে না।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, এসব ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ। সংস্থাটি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকার ও সমাজের সকল স্তরকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ২০ হাজারের মতো নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়। ২০২২ সালে দায়ের হয় ২১,৭৬৬টি, ২০২৩ সালে ১৮,৯৪১টি এবং ২০২৪ সালে ১৭,৫৭১টি মামলা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসেই ৪,৯২৪টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে শুধু মার্চেই রয়েছে ২,০৫৪টি ঘটনা। এপ্রিল মাসে নথিভুক্ত হয় ২,০৮৯টি নির্যাতনের অভিযোগ।

নিচে সাম্প্রতিক কয়েকটি মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ দেওয়া হলো, যা এই সহিংসতার ভয়াবহতাকে তুলে ধরে:

  • মাগুরা, ৫ মার্চ: তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আট বছরের আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়ে ১৩ মার্চ মারা যায়।

  • তেজকুনি পাড়া, ১২ মে: পাঁচ বছরের শিশু রোজা মনির মরদেহ বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার, শরীরে ছিল আঘাত ও গরম পানির ফোসকা।

  • মুন্সীগঞ্জ, ৯ মে: পিকনিকে অংশ নেওয়া দুই তরুণীকে জনসমক্ষে বেল্ট দিয়ে মারধর।

  • শেওড়াপাড়া, ৯ মে: ভাগনের হাতে খুন হন দুই বোন, হত্যাকারী জানাজায় অংশ নেয়।

  • বাউনিয়াবাদ, ১৫ এপ্রিল: গ্যারেজে কাজ করা শিশুকে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা।

  • পটুয়াখালী, ১৮ মার্চ: কিশোরী লামিয়া অপহরণ ও ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে।

এই ঘটনার বাইরেও দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে অগণিত নির্যাতনের ঘটনা, যা আলোচনার বাইরে থেকে যায়।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। হটলাইন চালু রয়েছে, এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চলছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “এই সহিংসতার পেছনে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, জেন্ডার বৈষম্য ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি।” তিনি অপরাধীদের মানসিক শিক্ষার ব্যবস্থা ও ভুক্তভোগীদের সহায়তায় সমাজকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন