বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গানকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তরুণ র্যাপার হান্নান। তার গাওয়া ‘আওয়াজ উডা’ গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। তবে সেই গানের মাধ্যমেই শুরু হয় তার জীবনের এক ভয়াবহ অধ্যায়; গ্রেপ্তার হন হান্নান।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, গত ৬ আগস্ট মুক্তি পান তিনি। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কারাগারে কাটানো সেই কঠিন দিনগুলোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন হান্নান।
হান্নান বলেন, “শুক্রবার দিন আমাকে কোর্টে চালান করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টা-সাড়ে ছটার দিকে আমি জেলের ভেতর ঢুকি। সেই রাতেই প্রথম জেলের খাবার খেয়েছিলাম।”
জেলের খাবারের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। স্মৃতিচারণ করে বলেন, “যখন কয়েদির প্লেটটা হাতে পেলাম, আমার চোখ দিয়ে অজান্তে পানি পড়ছিল। প্লেটটা এসে থামে আমার পায়ের সামনে। প্লেটের ভেতর ছিল আধা-কাঁচা, আধা-পাকা সবজি। সেই দৃশ্য দেখেই মনে পড়ল মায়ের কথা। মা বলতেন, ‘যেদিন আমি থাকব না, সেদিন বোঝবা খাওয়ার কষ্ট কী।'”
তিনি আরও যোগ করেন, “পেছন থেকে এক ছোট ভাই এসে বলল, ভাই খান খান। জানি আপনাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। এখন কি করবেন? খেয়ে বাঁচতে তো হবে। সেই কথাগুলো আমাকে নাড়া দিয়েছিল।”
কারাগারের ভেতরের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলার সময় হান্নান বলেন, “একটা গাড়িতে আমাদের ৮৭ জনকে তোলা হয়েছিল। সবাই সেইম মামলায়, অথচ সবাই নির্দোষ। কেউ জানত না আমি কে, আমি একজন মিউজিশিয়ান। আমি নিজেও ভাবছিলাম, আমি কি করলাম, কেন আমার সঙ্গে এমন হলো!”
কতদিন জেলে ছিলেন জানতে চাইলে হান্নান বলেন, “মোটামুটি ১৪ দিন জেলে ছিলাম। এর মধ্যে থানায় ছিলাম ২ দিন। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হয়েছিলাম, শুক্রবার থাকার পর শনিবার হাফবেলা নাগাদ আমাকে জেলে পাঠানো হয়।”
এই সাক্ষাৎকারে হান্নান স্পষ্ট করেছেন, তার গান শুধুই প্রতিবাদের ভাষা ছিল, কোনো অপরাধের হাতিয়ার নয়। কিন্তু সেই প্রতিবাদের মূল্য তাকে দিতে হয়েছে জেলের কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।