৮৮ বছর বয়সে গত সোমবার সকালে ভ্যাটিকানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পোপ ফ্রান্সিস (আসল নাম হোর্হে মারিও বেরগোলিও)। ২০১৩ সাল থেকে ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই আর্জেন্টাইন ধর্মগুরু ছিলেন একজন আজীবন ফুটবলপ্রেমী।
আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে বেড়ে ওঠা ফ্রান্সিস ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। কাপড়ের তৈরি বল দিয়ে রাস্তায় খেলতেন, খেলতেন গোলকিপার হিসেবে। তিনি মজা করে বলতেন, “আমার দুটো পা-ই বাঁকা ছিল, তাই সেরা খেলোয়াড় না হলেও গোলকিপার হিসেবে বেশ টিকেছিলাম। এতে শিখেছি, বিপদ যে কোনো দিক থেকেই আসতে পারে।”
তার প্রিয় ক্লাব ছিল সান লরেঞ্জো, যেখানে বাবা তাকে নিয়ে খেলা দেখতে যেতেন। রোমান্টিক ফুটবলের সেই যুগ নিয়ে স্মৃতিচারণ করতেন তিনি। পোপ হওয়ার পরেও ক্লাবটির সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। এক সময় ভ্যাটিকানের শিক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব বোকা জুনিয়রসের পক্ষ থেকে সদস্যপত্র গ্রহণ করায় বিতর্কও তৈরি হয়েছিল।
বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি, দিয়েগো মারাদোনা, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ থেকে শুরু করে জিয়ানলুইজি বুফনের মতো অনেকেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পোপ বহু জার্সি ও ফুটবল স্যুভেনিরে স্বাক্ষর করেছেন, যা এখন স্মরণীয় ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত।
ফ্রান্সিস বলতেন, “ফুটবল শুধু খেলা নয়, এটা শিক্ষা, সহনশীলতা আর শান্তির বার্তা দেয়। খেলাধুলা মানে শুধু শরীরচর্চা নয়, বরং মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।” ছোটদের উদ্দেশে তিনি বলতেন, “জীবনের খেলায় যেন কেউ বাদ না পড়ে। সবাই মিলে এগিয়ে যাওয়াটাই আসল জয়।”
ভ্যাটিকানে অবস্থানকালেও তিনি প্রিয় ক্লাব সান লরেঞ্জোর খেলার খবর নিয়মিত পেতেন একজন সুইস গার্ডের মাধ্যমে, যিনি প্রতিদিন ফলাফল ও লিগ টেবিল তার ডেস্কে রেখে যেতেন।
তার সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে দেওয়া মন্তব্য, “খেলাধুলা মানুষকে আরও মানবিক করে তোলে” — এই বাক্যই যেন ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসার সারাংশ।
পোপ ফ্রান্সিসের জীবনজুড়ে ফুটবল ছিল শুধু একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং নৈতিকতা ও মানবিকতা শেখার এক পরিপূর্ণ পাঠশালা।