সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জলদস্যুদের তৎপরতা। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে ও বনজীবীদের মধ্যে নতুন করে ছড়িয়েছে চরম আতঙ্ক। বর্তমানে বনে প্রবেশের আগে দস্যুদের অনুমতি নিতে হয়, নির্ধারিত টাকা বা ‘মাশুল’ না দিলে শিকার হতে হচ্ছে অপহরণ, নির্যাতন ও ছিনতাইয়ের।
স্থানীয় সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক জেলে ও বনজীবীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে একাধিক জলদস্যু বাহিনী। মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা হয়েছে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে। কেউ টাকা দিতে না পারলে তাদের ওপর চালানো হয়েছে শারীরিক নির্যাতন।
তদন্তে উঠে এসেছে, আগে আত্মসমর্পণ করা দেড় শতাধিক জলদস্যু নতুন করে সংঘবদ্ধ হয়ে নতুন সদস্যদের সামনে রেখে আবারও দস্যুতা শুরু করেছে। বর্তমানে সুন্দরবনে অন্তত ১০টি নতুন জলদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। কোস্ট গার্ড নিশ্চিত করেছে আলিফ ও কলিম শরীফ নামের দুটি বাহিনীর অস্তিত্ব।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন জেলেকে অপহরণ করে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ আদায় করেছে এসব বাহিনী। সর্বশেষ ঘটনায় ছয়জন নারীসহ ৩৩ জন জেলে অপহৃত হন।
অপহৃত জেলে ফারুক হোসেন বলেন, “সম্প্রতি মাছ ধরতে গিয়ে চারজন একসঙ্গে ধরা পড়ি। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভেতরে নিয়ে যায় এবং টাকা না দেওয়া পর্যন্ত নির্যাতন চালায়।” অপর জেলে রবিউল শেখ বলেন, “মুক্তিপণ সময়মতো না পাঠানোয় একজনকে মারধর করে। আমরা সবাই ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ি।”
জেলেদের ভাষ্যমতে, বর্তমানে শরীফ বাহিনী, দয়াল বাহিনীসহ সাত-আটটি সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী রয়েছে। প্রতিটি বাহিনীতে রয়েছে ৮-১০ জন সদস্য, যাদের হাতে দেশীয় রাইফেল, দো-নালা বন্দুক এবং ধারালো অস্ত্র থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে কোস্ট গার্ডের অভিযানে বেশ কিছু জলদস্যু ধরা পড়েছে এবং অপহৃত জেলেদের উদ্ধার করা হয়েছে। গত ছয় মাসে ২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬০টি দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
কোস্ট গার্ড (পশ্চিম জোন) এর জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান বলেন, “জলদস্যুরা বাড়ছে, এটা সত্যি। তাই অভিযানের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছি এবং ৩৩ জন জেলেকে উদ্ধার করেছি।”
সুন্দরবন বন বিভাগের বন সংরক্ষক মো. ইমরান হোসেন বলেন, “জলদস্যু নির্মূল একা বন বিভাগের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমরা কোস্ট গার্ড, র্যাব, নৌবাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থার সহায়তা নিচ্ছি। দমন অভিযানে একটি বিশেষ টিম গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।”