বর্তমান সময়ের এক স্মার্ট ক্যারিয়ার হলো ভিডিও গেমস। শুনতে আশ্চর্যজনক মনে হলেও, ভিডিও গেমস খেলাকেও ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং পেশার মতো বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টসের জনপ্রিয়তা ও মার্কেট ভ্যালু বেড়েই চলেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিযোগিতামূলক ভিডিও গেমিংকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও বৈধতা দেওয়ার ধারায় এবার যুক্ত হলো বাংলাদেশ। ই-স্পোর্টস একটি ক্রমবর্ধমান শিল্প এবং বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এটি একটি পেশাদার খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এবং এর সাথে যুক্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক সুযোগ।
বিভিন্ন দেশে ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট ও লিগ আয়োজিত হয়, এবং এতে প্রচুর দর্শকের সমাগম ঘটে। কিছু দেশে ই-স্পোর্টসকে খেলাধুলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং এটি একটি পেশাদার খেলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অনলাইনভিত্তিক কম্পিউটার কিংবা মোবাইল গেমিং প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টগুলোকে বলা হয় ইলেকট্রনিক স্পোর্টস বা ই-স্পোর্টস। ই-স্পোর্টস হলো ইলেকট্রনিক স্পোর্টসের সংক্ষিপ্ত রূপ, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রতিযোগিতামূলক খেলা, যা সাধারণত ভিডিও গেমের মাধ্যমে খেলা হয়।
ই-স্পোর্টস দলবদ্ধভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে খেলা যায়। এতে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও লিগ আয়োজন করা হয়, যেখানে খেলোয়াড়রা দলবদ্ধভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন গেমের টুর্নামেন্টে অংশ নেয় এবং পুরস্কার জেতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
বর্তমান বিশ্বে তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এই ই-স্পোর্টস। তাই এবার ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। গত ১৪ জুলাই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ এর ২ (২) ধারা মোতাবেক ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ই-স্পোর্টসকে সম্ভাব্য অলিম্পিক ডিসিপ্লিন হিসেবে বিবেচনায় নেওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর অনেক দেশই এর উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ নিয়েছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দিলে এ খাতে যুক্ত তরুণরা সরকারি সহায়তা পাবেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে।
সরকারি স্বীকৃতির ফলে ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়রা পাবেন ক্রীড়া ভাতা, প্রশিক্ষণ সুবিধা, ক্রীড়া সংক্রান্ত পুরস্কার ও অনুদানসহ অন্যান্য সুবিধা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও গেমিং ক্লাব ও প্রতিযোগিতা আয়োজন সহজ হবে।
ই-স্পোর্টস পরিচালনা প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. সাইফুল ইসলাম। কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির একজন অধ্যাপক এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া), যিনি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
এই কমিটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির গাইডলাইন অনুসরণ করে, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করবে। পাশাপাশি, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মতামত এবং প্রাসঙ্গিক আইন-বিধি ও সরকারি নিয়মকানুনও পর্যালোচনা করা হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞরা এই কমিটিকে সহায়তা প্রদান করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে মালয়েশিয়া সরকার ই-স্পোর্টসকে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছে, একই বছর জাপানও তাদের প্রথম গেমিংকেন্দ্রিক উচ্চবিদ্যালয় চালু করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-স্পোর্টস সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রোগ্রাম রয়েছে।
ই-স্পোর্টস আর্নিং ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৮তম। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১২০ জন ই-স্পোর্টস প্লেয়ার ৬৯টি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে মোট ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৮ মার্কিন ডলার পুরস্কার পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫৮ ডলার পুরস্কার পেয়েছে পাবজি মোবাইল গেম থেকে, যা বাংলাদেশের ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়দের সমস্ত উপার্জনের ৪৯.৩০%।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে এ খাতে জড়িত তরুণেরা সরকারি সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগও লাভ করবেন। এতে দেশের ডিজিটাল খাত ও তরুণ সমাজের কর্মসংস্থানেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এর মাধ্যমে তরুণ গেমাররা নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং ই-স্পোর্টস একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।