ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাপক স্থল ও আকাশ হামলা শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। বেঈত লাহিয়া শহরে ট্যাংক প্রবেশ করেছে। একই দিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৪৩ ফিলিস্তিনি, যার ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৩ হাজার। উচ্ছেদ ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনিরা পেরিয়ে গেল আরেকটি ‘নাকবা’।
বেঈত লাহিয়ার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মার্চের পর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা। সকাল থেকেই শুরু হয় মিসাইল হামলা ও গোলাবর্ষণ। ধোঁয়ার বোমা ছুঁড়ে ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক নিয়ে অগ্রসর হয় আল-সালাতিন এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি স্কুল ঘিরে ফেলে ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান, যেখানে শত শত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ইসরায়েল গত দুই মাস ধরে গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। এ সময়ের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ থাকায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গাজার দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ইসরায়েলকে কঠোরভাবে দোষারোপ না করে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন, গাজার মানুষ অভুক্ত রয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
একই সঙ্গে, বৃহস্পতিবার ছিল ‘নাকবা দিবস’-এর ৭৭তম বার্ষিকী। এই দিনেই গাজায় চালানো হামলায় নিহত হন আরও ১১৫ জন। নাকবা, অর্থাৎ ‘বিপর্যয়’—১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনির গৃহত্যাগের যন্ত্রণা স্মরণে এই দিনটি পালিত হয়। বর্তমান হামলা সেই ইতিহাসের বেদনা আরও গভীর করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৩,০১০ ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ১,১৯,৯১৯ জন। যদিও সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার নিখোঁজ রয়েছে, যাদের মৃত্যু নিশ্চিত ধরা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের ইসরায়েলে চালানো হামলায় প্রায় ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি জিম্মি হন। এর পর থেকেই নেতানিয়াহু সরকার ‘হামাস নির্মূল’ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার ৭০ শতাংশ এলাকা ‘নো গো জোনে’ পরিণত হয়েছে এবং অন্তত ৪ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
বাদরিয়া মোহারেব, যিনি ১৯৪৮ সালে জাফা থেকে পালিয়ে গাজায় এসেছিলেন, বর্তমানে বসবাস করছেন খান ইউনিসে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তার দুই নাতি নিহত হয়েছেন এবং তার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধের মতো ভয়াবহ কিছু কখনো দেখিনি। মানুষ একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।”