বাংলাদেশের নাট্য ও চলচ্চিত্র জগতে যাঁরা নিঃসন্দেহে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের মধ্যে অমল বোসের নাম উচ্চারণ করতেই হয়। প্রকৃত নাম অমলেন্দু বিশ্বাস হলেও ‘অমল বোস’ নামেই তিনি দর্শকের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন। ছয় দশকের অভিনয়জীবনে মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন উজ্জ্বল ও স্বতন্ত্র এক কণ্ঠস্বর।
জন্ম ও শৈশব
১৯৪৩ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকার বিক্রমপুর (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) জেলার কালাপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। কিছু তথ্যসূত্র অনুযায়ী, তাঁর জন্মস্থান ফরিদপুরের বোয়ালমারী বলেও উল্লেখ করা হয়।
অভিনয়ে সূচনা
অমল বোসের অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে মঞ্চনাটকের মাধ্যমে। তাঁর প্রথম নাটক ছিল জাগো হুয়া সাবেরা। এরপর বেতার নাটক ও টেলিভিশনে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
চলচ্চিত্রে যাত্রা
১৯৬৬ সালে আশার আলো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এরপর তিনি একের পর এক অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছেদহন, নান্টু ঘটক, শঙ্খনাদ, হাঙর নদী গ্রেনেড, শ্যামল ছায়া, গহীনে শব্দ, মনের মানুষ।
অভিনয়ের বৈশিষ্ট্য
অমল বোস ছিলেন মূলত চরিত্রাভিনেতা। তিনি সহজাত দক্ষতায় হাস্যরস, ট্র্যাজেডি কিংবা সমাজচিত্র—সব রকমের চরিত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। তাঁর সংলাপ বলার ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর ও দেহভঙ্গিমা দর্শককে মোহিত করত।
পুরস্কার ও সম্মাননা
২০০৭ সালে “মনের মানুষ” চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন—বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
শেষ অধ্যায়
দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভোগার পর, ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬৯ বছর।
অমল বোস ছিলেন এমন একজন শিল্পী, যিনি নায়ক নন—তবুও তাঁর না থাকাটা অনেক সিনেমাকে অসম্পূর্ণ করে তুলত। অভিনয় ছিল তাঁর নেশা, ভালোবাসা এবং জীবন। সেই ভালোবাসাই তাঁকে বাংলা অভিনয়ের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়ে পরিণত করেছে।