Ridge Bangla

বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষার বিধান

বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিক শ্রেণির সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে শ্রমজীবী মানুষকে শোষণ থেকে মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। ৩৪ অনুচ্ছেদে জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ৪০ অনুচ্ছেদে নাগরিকের পেশা ও ব্যবসার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষায় ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং ২০১৫ সালে শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। পাশাপাশি শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন ২০০৬বিধিমালা ২০১০ অনুযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। শ্রম আদালত ও শ্রম আপিল আদালত শ্রম আইন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বই পাওয়ার অধিকার রয়েছে (ধারা ৫ ও ৬)। দৈনিক ৮ ঘণ্টা ও সাপ্তাহিক ৪৮ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা নির্ধারিত, অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিকসহ সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা কাজ করানো যাবে (ধারা ১০০ ও ১০২)। ন্যূনতম মজুরি ও নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন পারিশ্রমিক নিশ্চিত করার বিধানও রয়েছে।

ছুটি শ্রমিকের মৌলিক অধিকার। বছরে ১১ দিন উৎসব ছুটিসহ অন্যান্য ছুটির বিধান রয়েছে (ধারা ১১৮)। চাকরি অবসানে ছুটির বিপরীতে বকেয়া মজুরি পাওয়ার অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে (ধারা ১১)।

অবসরকালীন সুবিধা, যেমন গ্র্যাচুইটি, ভবিষ্যৎ তহবিল এবং চাকরির অভিজ্ঞতার প্রত্যয়নপত্র পাওয়ার অধিকার শ্রম আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে (ধারা ২৮–৩১)। নারী শ্রমিকদের প্রসূতি ছুটি, রাতের শিফটে কাজ না করার সুরক্ষা ও অন্যান্য সুবিধাও আইন অনুযায়ী নিশ্চিত (ধারা ৪৬ ও ১০৯)।

কারখানায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাতাস চলাচল, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, প্রাথমিক চিকিৎসা, ক্যান্টিন ও শিশু কক্ষ রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে (ধারা ৫১–৬০, ৮৯, ৯২, ৯৪)। দুর্ঘটনা রোধে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে (ধারা ১৫০–১৫১)।

শ্রমিকদের রয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও যোগদানের অধিকার (ধারা ১৭৬)। তবে বাস্তবে অনেক সময় শ্রমিকরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত হন এবং বিভিন্নভাবে আইনি হয়রানির শিকার হন।

শ্রমিক ছাড়া উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত না হলে টেকসই শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।

আরো পড়ুন