যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ মঙ্গলবার চার দিনের সফরে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ—সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছেন। এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন অঞ্চলটি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় টালমাটাল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফরে গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, বাণিজ্য সহযোগিতা এবং তেলের দাম কমানো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে তার পরিবারের একাধিক ব্যবসা এবং আবাসন প্রকল্প রয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে চাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কিছু আলোচনাও সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি আলোচনায় অগ্রাধিকার
সফরের প্রথম দিনেই সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, প্যালান্টিয়রের সিইও অ্যালেক্স কার্প, সিটি গ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, অ্যালফাবেট এবং ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের এআই ও ক্রিপ্টো উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকসও থাকবেন।
সৌদি আরব ও আমিরাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বৈশ্বিক কেন্দ্র হতে চায়। এজন্য তারা সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে আগ্রহী। বাইডেন প্রশাসনের আইনি সীমাবদ্ধতা থাকলেও ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে নীতিমালা সহজ করতে পারে।
পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও নিরাপত্তা
ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম এবং সৌদি আরবের নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি এই সফরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। ট্রাম্প প্রশাসন এই উদ্যোগে সহায়তা দিতে আগ্রহী, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করবে।
গাজা সংকট ও বিতর্কিত প্রস্তাব
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ ট্রাম্পের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তিনি যুদ্ধের অবসানে প্রতিশ্রুতি দিলেও সম্প্রতি গাজাকে “আবাসন প্রকল্পে রূপান্তরযোগ্য এলাকা” হিসেবে অভিহিত করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
তেলের দাম ও অর্থনৈতিক কূটনীতি
সফরে সৌদি আরবের সঙ্গে ওপেকের তেল উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প বরাবরই তেলের দাম কমাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন ওপেককে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এছাড়া পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে “আরব উপসাগর” হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনাও উত্থাপিত হয়েছে—যা ইরানের কড়া প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
সিরিয়া ও আঞ্চলিক নিষেধাজ্ঞা
সফরে সিরিয়ার নতুন সরকারের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এতে অঞ্চলজুড়ে কূটনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সফর কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক কৌশলের দিকনির্দেশক বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।