Ridge Bangla

ভূ-স্বর্গে বিপর্যয়: কেন কাশ্মীর ঘিরে এত উত্তেজনা?

সম্প্রতি ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পাহালগামে ভারতীয় পর্যটকদের উপর আক্রমণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাশ্মীর সমস্যা নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ১৯৮০-র দশক থেকে ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামী/বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর যে সংঘাত চলছে, সম্প্রতি পাহালগামে পরিচালিত আক্রমণ সেই সংঘাতেরই অংশ। আর এই সংঘাতের সঙ্গে ভারতীয়–পাকিস্তানি এবং চীনা–ভারতীয় দ্বন্দ্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

কাশ্মীরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

কার্যত ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের অধীনে ‘জম্মু ও কাশ্মীর’ নামক যে বৃহৎ দেশীয় রাজ্যটি (princely state) ছিল, কাশ্মীর বলতে সাধারণভাবে সেই ভূখণ্ডকেই বোঝায়। বর্তমানে কাশ্মীরের বিস্তৃত ভূখণ্ড ভারত, পাকিস্তান এবং চীন এই তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত।

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে (union territory) বিভক্ত। জম্মু ও কাশ্মীরের আয়তন ৪২,২৪১ বর্গ কি.মি.। জম্মু ও কাশ্মীর দুই ভাগে বিভক্ত– কাশ্মীর উপত্যকা (১৫,৯৪৮ বর্গ কি.মি.) এবং জম্মু (২৬,২৯৩ বর্গ কি.মি.)। জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রায় ৬৩% মুসলিম এবং প্রায় ৩৫% হিন্দু। কিন্তু কাশ্মীর উপত্যকার জনসংখ্যার প্রায় ৯৬.৪% মুসলিম, আর জম্মুর জনসংখ্যার প্রায় ৬৭.৫% হিন্দু এবং ৩০% মুসলিম। অন্যদিকে, লাদাখের আয়তন ৫৯,১৪৬ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যার প্রায় ৪৬% মুসলিম ও ৩৯.৬% বৌদ্ধ।

পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বর্তমানে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর এবং গিলগিত-বালতিস্তান এই দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের আয়তন ১৩,২৯৭ বর্গ কি.মি. এবং অঞ্চলটির জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% মুসলিম। অন্যদিকে, গিলগিত-বালতিস্তানের আয়তন ৭২,৪৯৬ বর্গ কি.মি. এবং অঞ্চলটির জনসংখ্যার প্রায় ১০০% মুসলিম।

চীন-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর আকসাই চিন এবং ট্রান্স-কারাকোরাম ট্র‍্যাক্ট (বা শাকসগাম ট্র‍্যাক্ট) এই দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। প্রশাসনিকভাবে অঞ্চল দুটি চীনের জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। আকসাই চিনের আয়তন প্রায় ৩৮,০০০ বর্গ কি.মি. এবং ট্রান্স-কারাকোরাম ট্র‍্যাক্টের আয়তন প্রায় ৫,২০০ বর্গ কি.মি.। অঞ্চল দুটি জনবিরল।

সামগ্রিকভাবে, প্রাক্তন জম্মু ও কাশ্মীর দেশীয় রাজ্যের ভূখণ্ডের প্রায় ৪৪% ভারতের, প্রায় ৩৭% পাকিস্তানের এবং প্রায় ১৯% চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। কাশ্মীরের ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান ও চীনের তিক্ত দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও চীন-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে নিজস্ব ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে নিজস্ব ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করতে ইচ্ছুক। তদুপরি, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।

কাশ্মীরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

কাশ্মীরের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বিচিত্র। চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজবংশ কাশ্মীর শাসন করেছে। ১৩২০ থেকে ১৫৮৯ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটি স্বাধীন কাশ্মীর সালতানাতের শাসনাধীন ছিল। ১৫৮৯ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর মুঘল সালতানাতের, ১৭৫১ থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত দুররানি-শাসিত আফগানিস্তানের এবং ১৮২০ থেকে ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত শিখ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।

এদিকে ১৮২২ সালে শিখ সাম্রাজ্যের অধীনস্থ জম্মুর রাজা হন গুলাব সিং। তিনি শিখদের পক্ষে লাদাখ ও বালতিস্তান দখল করেন। পরবর্তীতে প্রথম ইঙ্গ–শিখ যুদ্ধ (১৮৪৫–১৮৪৬) চলাকালে গুলাব সিং শিখদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের সহায়তা করেন। যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হয় এবং ব্রিটিশদের কাছে কাশ্মীর উপত্যকাসহ বেশ কিছু ভূখণ্ড হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশরা ১৮৪৬ সালে সম্পাদিত অমৃতসর চুক্তি অনুযায়ী ৭৫ লক্ষ রুপির বিনিময়ে কাশ্মীর উপত্যকাকে গুলাব সিংয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর দেশীয় রাজ্যের সৃষ্টি হয় এবং ব্রিটিশদের সহায়তায় গুলাব সিং জম্মু ও কাশ্মীরে তার রাজবংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

এভাবে ১৮৪৬ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এক শতাব্দীব্যাপী একটি হিন্দু অভিজাত শ্রেণি জম্মু ও কাশ্মীর শাসন করে। এ সময় জম্মু ও কাশ্মীরের জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল মুসলিম এবং তাদের সিংহভাগই ছিল কৃষক। মহারাজাদের শাসনাধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলিমরা চরমভাবে নিগৃহীত ছিল এবং মাত্রাতিরিক্ত কর, বাধ্যতামূলক শ্রম, বৈষম্যমূলক নীতি ও ঋণের বোঝাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। এমতাবস্থায় ১৯৩০-এর দশক নাগাদ জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং অল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর মুসলিম কনফারেন্স।

কাশ্মীর সমস্যার আদ্যোপান্ত

১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, তখন জম্মু ও কাশ্মীরে বিষয়টি কেন্দ্র করে তিক্ত বিভাজন দেখা দেয়। কাশ্মীর উপত্যকায় প্রভাবশালী ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং জম্মুর হিন্দুরা ভারতের সঙ্গে যোগদানের পক্ষপাতী ছিল। অন্যদিকে, মুসলিম কনফারেন্স এবং জম্মুর মুসলিমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী ছিল। এমতাবস্থায় মহারাজা হরি সিং স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং এর ফলে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই অসন্তুষ্ট হয়।

এদিকে ১৯৪৭ সালের ৬ অক্টোবর জম্মুর পুঞ্চ ও মিরপুর অঞ্চলে মহারাজার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ আরম্ভ হয়। ১৪ অক্টোবর নাগাদ জম্মুতে হিন্দু ও শিখরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা আরম্ভ করে এবং এর ফলে ২০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ মুসলিম নিহত হয়। এমতাবস্থায় পাকিস্তানি-সমর্থিত পশতুন মিলিশিয়ারা জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান সরাসরি জম্মু ও কাশ্মীর অধিকারের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এমতাবস্থায় হরি সিং ভারতীয় সামরিক সহায়তা প্রার্থনা করেন। ২৬ অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীর আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রদেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে যোগ দেয় এবং এরপর ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে সামরিক হস্তক্ষেপ করে।

প্রথম ভারতীয়–পাকিস্তানি যুদ্ধের ফলে কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মুর সিংহভাগ অংশ ও লাদাখ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, আর জম্মুর অন্তর্ভুক্ত পুঞ্চ ও মিরপুর অঞ্চল এবং গিলগিত ও বালতিস্তান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। যুদ্ধ চলাকালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৪৮ সালের ২১ এপ্রিল ৪৭ নং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণভোটের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণ করার কথা ছিল। কিন্তু গণভোটের আগে অঞ্চলটি থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের সম্পূর্ণভাবে এবং ভারতীয় সৈন্যদের আংশিকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়ার শর্ত ছিল। ভারতের আশঙ্কা ছিল গণভোট হলে কাশ্মীরের মুসলিমরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিতে পারে, অন্যদিকে পাকিস্তানের আশঙ্কা ছিল পাকিস্তান আগে সৈন্য প্রত্যাহার করলে ভারতীয়রা সৈন্য প্রত্যাহার না-ও করতে পারে। এর ফলে ভারত বা পাকিস্তান কেউই ৪৭ নং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের শর্ত পূরণ করেনি।

এদিকে ১৯৫০-এর দশকের শেষ নাগাদ লাদাখের সীমান্ত নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১৯৬২ সালে চীনা–ভারতীয় যুদ্ধে চীনের নিকট ভারত পরাজিত হয় এবং চীন ভারতের কাছ থেকে আকসাই চিন দখল করে নেয়। ১৯৬৩ সালে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং পাকিস্তান চীনের নিকট ট্রান্স-কারাকোরাম ট্র‍্যাক্ট হস্তান্তর করে। ১৯৬৫ সালের আগস্টে পাকিস্তান ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ পরিচালনার মাধ্যমে ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিদ্রোহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সৈন্য অনুপ্রবেশ করায় এবং এর ফলে দ্বিতীয় ভারতীয়–পাকিস্তানি যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের ফলে কাশ্মীরের সীমানার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে ভারতও। কিন্তু সেসময় ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানি-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অংশবিশেষ দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সম্পাদিত সিমলা চুক্তি অনুসারে ভারত দখলকৃত অঞ্চলের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ পাকিস্তানের নিকট প্রত্যর্পণ করে, কিন্তু পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রায় ৮৮৩ বর্গ কি.মি. ভূখণ্ড ভারতের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। এরপর ১৯৮৪ সালে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী ‘অপারেশন মেঘদূত’ পরিচালনা করে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহ অধিকার করে নেয়।

উল্লেখ্য, নানাবিধ কারণে ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুসলিমদের একাংশের মধ্যে বরাবরই অসন্তোষ বিদ্যমান ছিল। ১৯৮৭ সালে ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হলে কাশ্মীর জুড়ে অসন্তোষের মাত্রা আরো তীব্র হয়। ১৯৮৯ সাল থেকে বিভিন্ন কাশ্মীরি সশস্ত্র সংগঠন ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধ আরম্ভ করে, এবং এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত চলমান। এই সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হিজব-উল-মুজাহিদিন, হারাকাত-উল-মুজাহিদিন, পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট, লস্কর-ই-তাইবা, জইশ-ই-মুহাম্মাদ প্রভৃতি। সংঘাতের ফলে ১৯৯০ সালে ৯০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ কাশ্মীরি পণ্ডিত কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে ভারতের অন্যত্র চলে যায়।

ভারতীয় সরকার কাশ্মীরে চার থেকে সাত লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও কাশ্মীরের পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়নি। কাশ্মীরের বেসামরিক মুসলিমদের উপর ভারতীয় সৈন্য ও নিরাপত্তারক্ষীদের নির্যাতন পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে রেখেছে। ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরে চলমান যুদ্ধে অন্তত ৩,৫৯০ জন ভারতীয় সৈন্য ও নিরাপত্তারক্ষী এবং অন্তত ১৩,৩২১ জন কাশ্মীরি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তদুপরি, এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধের ফলে অন্তত ২০,০০০ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

পাকিস্তান কাশ্মীরের সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে সমর্থন প্রদানের মধ্যে দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা করছে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা লাদাখের অন্তর্ভুক্ত কারগিল জেলার অংশবিশেষ দখল করে নেয়, কিন্তু একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর তারা অঞ্চলটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীরকে নিয়ে আর কোনো যুদ্ধ হয়নি, কিন্তু ২০১৬–২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০–২০২১ সালে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে। এদিকে ২০১৯ সালে ভারতীয় সরকার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বাতিলের মধ্য দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করেছে এবং অঞ্চলটিকে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। সর্বশেষ ২০২৫ সালে পাহালগামে সংঘটিত আক্রমণকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী সম্পর্কের নতুন করে অবনতি ঘটেছে।

এখন পর্যন্ত কাশ্মীর সমস্যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলোর একটি। যতদিন পর্যন্ত ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যাবলির সমাধান না হবে, ততদিন কাশ্মীর দক্ষিণ এশিয়ায় একটি যুদ্ধের ফ্ল্যাশপয়েন্ট হিসেবে বিরাজ করবে।

আরো পড়ুন