Ridge Bangla

বাংলাদেশে কি ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি সম্ভব?

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ধারণা নিয়ে ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হলেও, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে শাসকদের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের প্রতিশ্রুতি পূরণের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং, বাংলাদেশের ক্ষমতা, সম্পদ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোকে পুরোপুরি ঢাকা নির্ভর করা হয়, যেটি বাংলাদেশে বারবার স্বৈরশাসক উত্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।

১৮ কোটি মানুষের রাষ্ট্রীয় সেবাপ্রাপ্তি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের উপর নির্ভরশীল করে ফেলায় বাংলাদেশে নাগরিক সুবিধা কখনোই প্রত্যাশার ধারে-কাছে যায়নি, বারংবার রাষ্ট্র নিপীড়ক যন্ত্র হিসেবে হাজির হয়েছে নাগরিক জীবনে।

বাংলাদেশের মতো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেশে জনগণের প্রত্যাশানুযায়ী নাগরিক সেবাপ্রাপ্তির দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন, প্রয়োজন প্রতিষ্ঠান নির্মাণের। একইসাথে জরুরি রাষ্ট্রকে নিপীড়ক যন্ত্র বানানোর ঘটনা আটকানো। ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামো দুই ক্ষেত্রেই সংস্কার প্রস্তাবে তুলনামূলকভাবে সম্ভাব্য ভালো দৃশ্যপট হাজির করে, পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষীণ স্বরে হলেও ফেডারেল কাঠামোর ব্যাপারে দাবি শোনা গেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।

ফেডারেল বাংলাদেশ কেমন হবে?

ফেডারেল কাঠামো সাধারণত প্রেসিডেন্টশাসিত হলেও, প্রধানমন্ত্রীশাসিত ব্যবস্থাতেও ফেডারেল কাঠামো কাজ করতে পারে। আবার, রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের মধ্যেও ফেডারেল কাঠামো কাজ করতে পারে। বাংলাদেশে ফেডারেল কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলে বিদ্যমান বিভাগগুলো অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের স্বতন্ত্র আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ থাকবে। নির্বাচিত গভর্নর নির্বাহী বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন, গভর্নরের অধীনে মন্ত্রীসভা গঠিত হবে। আইনসভার আকার এবং সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়া অঙ্গরাজ্যের এখতিয়ারে থাকবে, তবে প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধি আসতে পারে। গড়ে এই আইনসভার সদস্য হতে পারে ১০০ জনের মতো। অধিকাংশ অপরাধই অঙ্গরাজ্যের কাঠামোর মধ্যে বিচার হবে, ফেডারেল অপরাধ হলে সেটি যাবে ফেডারেল কোর্টে।

প্রত্যেক নাগরিককে আলাদাভাবে ফেডারেল এবং অঙ্গরাজ্যের কর পরিশোধ করতে হবে। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের আয়-ব্যয়ের স্বতন্ত্র হিসাব থাকবে, নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী পরিকল্পনা নেবে।

সরকারি চাকরিতেও ফেডারেল এবং অঙ্গরাজ্য, দুই ধরনের নিয়োগ হবে। কেন্দ্রীয় সরকার নিজের নির্বাহী কাঠামো পরিচালনার জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে, অঙ্গরাজ্যের সরকারও নিজেদের নির্বাহী বিভাগের জন্য স্বতন্ত্রভাবে সেটি করবে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্যসেবা থাকবে অঙ্গরাজ্যের সরকারের হাতে, একইভাবে শিক্ষাকেন্দ্রিক কার্যক্রমও যাবে তাদের হাতে। অর্থাৎ, অঙ্গরাজ্য তাদের কর্ম কমিশনের মাধ্যমে আমলা, পুলিশ এবং অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেবে। অথবা, অঙ্গরাজ্য ফেডারেল কর্ম কমিশনেও তাদের নিয়োগ চাহিদা পাঠাতে পারে, যেটির আলোকে নিয়োগ পরীক্ষা ফেডারেল কর্ম কমিশন পরিচালনা করবে।

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ বা তিন-চতুর্থাংশ অঙ্গরাজ্যের সম্মতি থাকতে হবে। সংবিধানে যেসব বিষয়ে ক্ষমতার বিভাজন পরিষ্কার থাকবে না, সেগুলো অঙ্গরাজ্যের সরকারের এখতিয়ার বলে বিবেচিত হবে।

ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে প্রতিরক্ষা আর পররাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব থাকবে ফেডারেল সরকারের, ফেডারেল সরকারের অধীনে ভিন্ন আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনী থাকতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে ফেডারেল সরকারের, মুদ্রা ইস্যু করার ক্ষমতাও থাকবে তাদের হাতে। ফেডারেল কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে সেটি আইনসভা প্রস্তাব করতে পারবে, রাষ্ট্রপ্রধান সেটি আইনে পরিণত করতে পারবেন সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শেষে।

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা নেই

শাসনকার্যে সুবিধার জন্য পৃথিবীর বহু দেশই ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে, ফেডারেল কাঠামো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছে, গণতন্ত্রায়ণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মতামত দেওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে। তবে, ফেডারেল কাঠামো গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বিরাট ভূমিকা রেখেছে রাষ্ট্রের জনসংখ্যার আকার।

বাংলাদেশ পৃথিবীর ৮ম জনবহুল দেশ। বাংলাদেশের চেয়ে জনসংখ্যা বেশি থাকা দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ছাড়া সবারই ফেডারেল কাঠামো রয়েছে। ফেডারেল কাঠামো মানুষের রাজধানীমুখী কার্যক্রম কমিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ের দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যের সরকারকে অর্পণ করে বিদেশনীতি আর বাণিজ্যে মনোযোগী হয়ে ভালো করার সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে ঢাকামুখী হয়েছে, ভারতের মানুষ একইভাবে দিল্লীমুখী বা চীনের মানুষ বেইজিংমুখী হলে কী হতো ভাবুন তো? অর্থাৎ, জনগণ জাতিগতভাবে হোমোজেনাস হোক আর হেটারোজেনাস, দেশের জনসংখ্যা বেশি হলে ফেডারেল কাঠামোই ভালো।

শাসকের স্বৈরাচারী আর রাষ্ট্রের নিপীড়ক হওয়ার সুযোগ কমবে

বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটা বড় অংশই একসময় বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপনিবেশ ছিলো, ফলে রাষ্ট্রের চরিত্র পৃথিবীজুড়ে মৌলিক কর্তৃত্ববাদী। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দুর্বল থাকায় বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচারী শাসকের উত্থান হয়েছে, এককেন্দ্রিক কাঠামোর পাশাপাশি ফেডারেল কাঠামোতেও হয়েছে। তবে, দুই কাঠামোর মধ্যে ফেডারেল কাঠামো স্বৈরাচারের উত্থান তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে ঠেকিয়েছে।

একজন শাসকের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার আর রাজনৈতিক সহিংসতা হরণ করতে হয়, গণতন্ত্রকামী নাগরিকদের রাষ্ট্রকাঠামো ব্যবহার করে থামিয়ে দিতে হয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এই কাজগুলো প্রাথমিকভাবে করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। ফেডারেল কাঠামোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃত্ব ফেডারেল আর অঙ্গরাজ্যের সরকারের মধ্যে বিভাজিত হয়ে থাকে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন বহু মানুষ। ফলে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়গুলো সহজে মোকাবেলা করা যায়।

সামরিক বাহিনী সাধারণত এসব ক্ষেত্রে নিপীড়কের ভূমিকায় আসে না, লাতিন আমেরিকায় স্বৈরশাসক হতে চাওয়া সাতজনের মধ্যে পাঁচজন জনতুষ্টীবাদী শাসকই সামরিক বাহিনীর সমর্থন পাননি। বাংলাদেশেও একই ঘটনা দেখা গেছে। অর্থাৎ, সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ফেডারেল সরকারের হাতে থাকলেও সেটি স্বৈরাচারের উত্থানের প্রভাবক হওয়ার ঝুঁকি কম এই শতাব্দীতে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার পালাবদল আটকে দিতে ব্যর্থ হয়েছে, রদ্রিগো দুতার্তের আমলে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটলেও বিরোধী দলকে নির্মূলের ঘটনা ঘটেনি, ব্রাজিলের বলসোনারোকে নির্বাচনের মাধ্যমে বিদায়ের সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিলিয়ানরা।

ফেডারেল কাঠামো হলে দুর্নীতি কমবে

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম-বেশি দুর্নীতির ঘটনা ঘটে, সেগুলো কখনো ব্যক্তিগত, কখনো প্রাতিষ্ঠানিক। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর বেশিরভাগেরই কেন্দ্রীভূত সরকারব্যবস্থা রয়েছে, সরকারের কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অবতারবাদ।

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি সরকারি সেবার জন্য ঘুষ দিতে হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা বড় অংশ দুর্নীতিগ্রস্থ, রাজনীতিবিদদের একটা বড় অংশই অর্থপাচারের মতো অপরাধের সাথে যুক্ত। রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের নয়-ছয় হওয়া নিয়মিত ঘটনা, ভূমি অধিদপ্তর আর রেলওয়েতে পৃথিবীর ইতিহাসে পাওয়া সব প্রকারের দুর্নীতি দেখা যায়। বাংলাদেশের দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক ঘরানার, অর্থাৎ সবাই মিলেমিশে দুর্নীতি করে। এরকম একটি কাঠামোতে ফেডারেল কাঠামো দুর্নীতির ঘটনা কমাতে পারে তিনটি কারণে।

প্রথমত, রাষ্ট্রের অর্থ ফেডারেল আর অঙ্গরাজ্যের সরকারের হাতে বিভাজিত থাকায় এখন দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়লেও তার হাতে খুব বেশি রিসোর্স থাকবে না লোপাটের জন্য। আবার, আমলাদের মধ্যে দুর্নীতি কমবে, কারণ তখন অর্থের বিপরীতে প্রয়োগ মনিটর করার জন্য ব্যক্তি বাড়বেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য পঞ্চগড়ে একটা প্রকল্পের অগ্রগতির নিয়মিত খবর রাখা কঠিন, রংপুরের গভর্নরের জন্য না।

দ্বিতীয়ত, ফেডারেল কাঠামো নাগরিকদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়ায়। রাজনীতিতে নাগরিকদের অংশ্রগ্রহণ বাড়লে সেটি রাজনীতিবিদদের বরাদ্দকৃত অর্থ বেশি খরচ করতে বাধ্য করে, ফলে তাদের লোপাটের জন্য অর্থের পরিমাণ হ্রাস পায়।

তৃতীয়ত, ফেডারেল কাঠামোতে অধিকাংশ নাগরিক সুবিধা দেবে অঙ্গরাজ্যের সরকার। দুর্নীতিসহ যেকোনো প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে দুর্বল অঙ্গরাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ।

মানুষ কোন সরকারকে বেশি বিশ্বাস করে?

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকেই কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিতে হয়, সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আর মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বাস তৈরি করতে হয়। কিন্তু, সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস পৃথিবীজুড়েই কমছে, মানুষের বিশ্বাস কমছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপরও। সাধারণভাবে, মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়ে স্থানীয় সরকারের উপর বেশি বিশ্বাস রাখে, ফেডারেল কাঠামোতে যেটি নিশ্চিত করা সহজ। একইভাবে, ফেডারেল কাঠামোতে আইন তৈরিতে মানুষের সংস্পর্শ বেশি হওয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সহজ হয়।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর অধিকাংশ নাগরিক সেবাই মানুষ পাচ্ছে স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে, মানুষের দুর্যোগ-দুর্ভোগে স্থানীয় সরকারই পাশে দাঁড়াচ্ছে। জরিপ বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় স্থানীয় সরকার নাগরিক সেবা প্রদানে নাগরিকদের ইতিবাচক ফিডব্যাক পাচ্ছে বেশি। বাংলাদেশের এমন যুদ্ধকেন্দ্রিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা কম থাকলেও, বাংলাদেশ নিয়মিতভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। শক্তিশালী ফেডারেল কাঠামো এসব দুর্যোগ মোকাবেলার প্রক্রিয়াকে সহজ করবে, রাষ্ট্র মানুষের প্রয়োজনগুলোকে আরো ভালোভাবে বুঝতে শিখবে। সামগ্রিকভাবে এই নাগরিক সুবিধার মান বাড়াবে, নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে বিঘ্ন কমাবে।

আমলাতন্ত্রের আকার কি বাড়বে?

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের আকার বড়, একইসাথে বাজেটের একটা বড় অংশই যায় বেতনভাতা আর পেনশন দিতে গিয়ে। বেসরকারি খাত বিকশিত না হওয়ায় মানুষের চাকরির জন্য সরকারি খাতের উপরই নির্ভর করতে হয়েছে, সেই প্রতিযোগিতার বাইরে অনেকে মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। ফেডারেল কাঠামো তৈরি হলে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়ার কথা। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ইতোমধ্যেই অনেক বড় এবং ফেডারেল কাঠামো হলে নতুন করে খরচ তেমন বাড়বে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের আমলাতন্ত্রে কাজ করেন ৩৩ লাখ মানুষ, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে চাকরি করছেন ১৫ লাখ। ফেডারেল কাঠামোতে কাজের পরিসর বাড়লে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ আছে।

ফেডারেলিজমে বৈচিত্র্য আছে

ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামো থাকা দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া কোনো প্রাদেশিক কর নেয় না, কানাডা কিংবা জার্মানির পার্লামেন্টে ফেডারেল চেম্বার নেই। বেলজিয়ামে প্রাদেশিক বিচারব্যবস্থা নেই, ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় নিয়মিতভাবেই অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ করেছে। ব্রাজিলের প্রদেশগুলোর সক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি, আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেডারেল কাঠামো থাকলেও কোনো প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশ যদি ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বাংলাদেশেরও মৌলিক কাঠামো ঠিক রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী কাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ থাকবে। ফেডারেলিজমে নাগরিকদের সুবিধা থাকার পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সেদিকে যাওয়া নির্ভর করবে কেন্দ্রে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কতটুকু গণতান্ত্রিক ও নাগরিকবান্ধব হতে প্রস্তুত, তার উপর।

আরো পড়ুন